জাতীয় নাট্যোৎসব: এক্সপেরিমেন্টালে অনুশীলনের ‘বুদেরামের কূপে পড়া’
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৪৫
‘জঙ্গি-অবক্ষয়-দুর্নীতি, মানবে না এ সংস্কৃতি’—এই প্রতিপাদ্যে সারাদেশে চার শতাধিক নাট্য সংগঠনের অংশগ্রহণে একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০’। দেশের ৬৪ জেলায় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে এই নাট্যোৎসবের। চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হচ্ছে রাজশাহীর অনুশীলন নাট্যদল’র ‘বুদেরামের কূপে পড়া’। মলয় ভৌমিক’র রচনা ও নির্দেশনায় নাটকটির প্রদর্শনী সন্ধ্যা ৭টায়।
‘অনুশীলন নাট্যদল’র জন্ম হয়েছিল, ‘নাট্য আন্দোলন সমাজ পরিবর্তন আন্দোলনের একটি অংশ’ শ্লোগান মুখে নিয়ে। দলের বয়স এখন চল্লিশ বছর। এই চল্লিশ বছর নিরন্তর আলো খোঁজা, আরও আরও আলো হয়ে ওঠার অবিরাম প্রচেষ্টা। ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে জমা হয়েছে তেষট্টি প্রযোজনা এবং তার ছয় শতাধিক প্রদর্শনী। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে কয়েকশ নাট্যকর্মী। বিকশিত হয়েছে নিজস্ব নাট্যকার, নির্দেশক, ডিজাইনার।
নিজস্ব নাট্যকারের নাটক মঞ্চায়ন ও নাটকের বিষয়বস্তুতে সমসাময়িকতার প্রয়োজনীয়তাকে দল শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। পাশাপাশি নিজস্ব নাট্য-নির্মাণ রীতির অনুসন্ধান প্রচেষ্টা চলছে গত দুই দশক ধরে। এ নিয়ে হয়েছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
এসব প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দল আপাত একটা নিজস্ব নির্মাণ রীতির ওপর দাঁড়িয়েছে। এই রীতিতে ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের আঙ্গিকগুলোকে আধুনিক নাট্যরীতির সাথে সমন্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি এর সাথে জোর দেওয়া হচ্ছে, যে কোনো স্থানে মঞ্চায়নযোগ্য (এমটি স্পেস), সহজ বহনযোগ্য (পোর্টেবল) ও স্বল্প ব্যয়ে নির্মাণ (লিস্ট কস্ট)- এই তিন বৈশিষ্ট্যের ওপর। আর এ বৈশিষ্ট্যগুলো নেওয়া হয়েছে আমাদের বাংলা নাট্যরীতির বিপুল ভান্ডার থেকেই। দলের প্রত্যাশা, পরীক্ষায় উর্ত্তীণ এই রীতির আরো বিস্তার ঘটানো।
‘বুদেরামের কূপে পড়া’ নাটকটি প্রসঙ্গে এর নাট্যকার ও নির্দেশক মলয় ভৌমিক বললেন, ‘এক বৃত্ত থেকে আর এক বৃত্তে, ক্ষুদ্র থেকে বৃহতে, পৌনঃপুনিক কুশলী সব আয়োজন। ক্রমাগত কেন্দ্রাভিমুখ সেই লক্ষ্য- মুনাফা, ক্ষমতা, লোভ। সাথে সাম্প্রদায়িকতা সন্ত্রাস যুদ্ধ হত্যা ধর্ষণ লুট বাস্তুচ্যুতি দুর্ভিক্ষ বৈষম্য বিচ্ছিন্নতা বিভ্রান্তি বিষন্নতা- এমন শত অনুষঙ্গ পৃথিবীকে করে তুলেছে নরককূপ। এবং যে কূপে জল নেই, জীবন নেই, নেই মৃত্যুও। সাধারণের দুঃসহ এই যাতনার বিদ্রুপাত্মক উপস্থাপন ‘বুদেরামের কূপে পড়া’।’
তিনি আরো বললেন, ‘নির্মাণে স্বল্প ব্যয়, সহজ বহনযোগ্য এবং যে কোনো স্থানে অভিনয়যোগ্য- এই তিন বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি বাংলানাট্যের নানা আঙ্গিকের সাথে সমসাময়িক বিশ্ব নাট্যআঙ্গিকের মিশেল প্রচেষ্টা আছে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার আড়ালে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও অনভিজ্ঞতা, যা নির্মাণকুশলতাকে ধাক্কা দেয় বারবার। যদিও দর্শকের এসব আমলে নেবার কথা নয়, তাদের সমালোচনা আমাদের চলার পথে পাথেয়।’
‘বুদেরামের কূপে পড়া’ নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাকিবুল আলম মিলন, স্বাধীন খান, খাইরুল ইসলাম, তানভির অর্ক, রায়হান উদ্দিন, নবনীতা চক্রবর্তী ও রেজওয়ানুল হক। সঙ্গীতে- শৌভিক রায়, কোরিওগ্রাফিতে- ল্যাডলী মোহন মৈত্র, মঞ্চ- মনির উদ্দিন টভেল ও কনক কুমার পাঠক, আলো- আল্ জাবির, পোশাক- টভেল ও ল্যাডলী এবং প্রযোজনা আধিকারিক- এস. এম. আবু বকর।
অনুশীলন নাট্যদল জাতীয় নাট্যোৎসব ২০২০ বুদেরামের কূপে পড়া মলয় ভৌমিক