আমি ওকে ঘৃণা করি এমন না, ওর জন্য মায়া লাগে: নোবেলের স্ত্রী
৬ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৫৭
ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলার রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’তে অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন সংগীতশিল্পী নোবেল। তার কিছুদিন পর তিনি মেহেরুবা সালসাবিলকে বিয়ের খবরটি জানান। বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার জীবন। কয়েক মাস আগে তারা দুজন আলাদা থাকছেন এ ব্যাপারটি জানা যায়।
বুধবার (৬ অক্টোবর) জানা গেল, নোবেল ও সালসাবিলের মধ্যকার দাম্পত্য সম্পর্ক আর নেই। সালসাবিল তালাক নোটিশ পাঠিয়েছেন। যেখানে তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘স্ত্রী হিসেবে দুই বছরের খোরপোষ না দেওয়া, স্বামীর মানসিক ভারসাম্যহীনতা, কাবিনের শর্ত লঙ্ঘন, চরিত্রহীনতা, নির্যাতনকারী এবং বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত, মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে নোবেলের সঙ্গে সংসার করতে চাইছেন না।
কেন এ বিচ্ছেদ, এর পেছনে কী কারণ কাজ করেছে সালসাবিলের কাছে তা জানার চেষ্টা করেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল।
নোবেলের সঙ্গে আপনার বিবাহ বিচ্ছেদের খবরটি কতটুকু সত্য? তিনি এ নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ওকে আমি ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছি। ডিভোর্সের নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ পাওয়ার পর পরই যদি সে সাইন করে, তাহলে তখনই কার্যকর হয়ে যাবে। আর সাইন না করলে তিন মাস পরে এমনিতেই কার্যকর হয়ে যাবে বা তিন মাস পর সবাই বসে। ওর (নোবেল) ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে আমি জানি না। হয়তো সে সাইন করেছে, যেটা আমি এখনও জানি না।
আপনারা তো অনেকদিন যাবত আলাদা থাকছিলেন। কবে থেকে আলাদা থাকছেন এবং কী কারণে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।
নোবেল আমাকে অনেক মারধর করতো। সে প্রচুর ড্রাগস নিত। আমার তো স্বামী—এক দিন, দুই দিন কিছু বলবো না, কিন্তু তিন দিনের দিন তো কথা বলবো। আমি বাধা দিতাম, বলতাম— না, তুমি ড্রাগস নিবা না; তখন সে মারামারি করতো। একদিন অনেক বেশি পরিমাণে মারধর করার কারণে ৯৯৯ এ কল দিই। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। আমার অবস্থা খুবই বাজে ছিল। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমার কাছে মেডিকেল সার্টিফিকেট, জিডির কপিসহ সকল আইনি কাগজপত্র রয়েছে।
এরপরও আমি চেষ্টা করেছি—ও যদি ভালো হয়, ও যদি সুস্থ হয়। ওর মানসিক কিছু সমস্যা রয়েছে। ড্রাগস নিতে নিতে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলেছে। ওকে দিনের পর দিন অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। মেডিটেশনে রেখেছি। কোন লাভ হয়নি। দেখা যেত, তিন মাস ভালো থাকে তো আবার আগের অবস্থা।
৯৯৯ এ কল করার পর পুলিশ আসার ঘটনা কবের?
এটা গত বছরের জুন জুলাইয়ের দিকের ঘটনা। তখন থেকেই আমরা আলাদা থাকছি।
আপনি বলেছেন, নোবেল পরনারীতে আসক্ত। এ আসক্তি কি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থা থেকেই?
বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ হলো না, বান্দরবানে এক নারীসহ হোটেলে থাকছে, ছবি আপলোড করলো। বসে বসে গাঁজা খাচ্ছে। পরনারী ওর নিত্যদিনের সঙ্গী।
কিছুদিন আগে আপনার সঙ্গে দেখা করার একটি ছবি দিয়েছিলেন নোবেল। তখন কি আপনারা আবার একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করার অংশ হিসেবে দেখা করেছিলেন?
তার সঙ্গে আমার সবসময় যোগাযোগ ছিল। এমনকি ও যেদিন বান্দরবানে যায়, ওইদিনও কিন্তু বাসে উঠার আগ পর্যন্ত আমার সঙ্গে ভিডিও কলে ছিল। আমাকে দেখাচ্ছিল, ওর সঙ্গে চারজন ছেলে যাচ্ছে। ওরা মোট পাঁচজন, আর কেউ নেই। তারপর ওখানে যাওয়ার পর যা আপলোড করলো! তা আমার চিন্তার বাইরে, মেয়ে কোথায় থেকে আসলো! খুব বেশি ড্রাগস নেওয়ার কারণে একেক সময় একেক রকম হয়ে যায়। ভারসম্যটা ধরে রাখতে পারে না।
নোবেল কীভাবে মাদকে আসক্ত হলো এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন কিনা?
এভাবে আমাকে ওর মা আমাকে যেটা বলেছেন, ও ক্লাশ সেভেন থেকেই ড্রাগস নেয়। ক্লাশ সেভেন বা সিক্সে থাকা অবস্থায় ড্রাগস ও নারীঘটিত কারণে স্কুল তাকে রেড টিসি দেয়। তারপর তাকে ভারতে পাঠানো হয়। সেখানে পাঠানোর পর সেখানেও একই অবস্থা। সে আর পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারে না—ড্রাগসের কারণে। এরপর তার পরিবার থেকে তাকে রিহ্যাবে পাঠানো হয়। ওখান থেকে আসার পর সে ভালো থাকতো— দুই থেকে তিন মাস। আবার সে ড্রাগসের ভিতরেই ঢুকে যেত।
আপনার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নোবেল পরিবার বা তার তরফ থেকে আপনার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেছে কিনা?
না, ওর পরিবারের কেউ আমাকে কল দেয় নাই, ও কোনো কল দেয় নাই।
উনার পরিবারের বিরুদ্ধে আপনার কোনো অভিযোগ আছে কিনা?
তার বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি চাই ও ভালো থাকুক। কোন ধরনের কাঁদা ছোড়াছুড়ি না হোক। আমি ওর সুস্থতা কামনা করি।
যদিও আপনাদের সম্পর্কটি ভেঙ্গে যাচ্ছে, তারপরও জানতে চাওয়া আপনাদের সম্পর্ক কীভাবে হয়েছিল।
ওর সঙ্গে আমার ইনস্টাগ্রামে প্রথম পরিচয় হয়েছিল। সে মাত্র সারেগামাপা প্রতিযোগীতা থেকে এসেছে। তখন সে আমেরিকাতে ছিল। দুই মাস প্রেমের পর সে বলে, প্রেমের তো আসলে কোন গ্যারান্টি নাই। আজকে প্রেম আছে, কালকে নেই। তারচেয়ে চলো আমরা বিয়ে করি। তখন আমার পরিবার থেকে ওকে মানেনি—মিডিয়া জগতের দেখে। এখনও মেনে নেয়নি।
ও আমাকে একদিন ওর ডেমরায় বাসায় যেতে বলে। ওখানে যাওয়ার পর ওর বাবা-মাসহ আমাকে বোঝায়। ওভাবেই ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর ওর সঙ্গে আমার বিয়েটা হয়। বিয়েতে আমার পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না। কিন্তু ওর বাবা-মাসহ ওর কাজিনরা উপস্থিত ছিল।
আপনার সঙ্গে বিয়ের আগেও নাকি তিনি বিয়ে করেছিলেন। এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানতেন কি?
আমাকে বলেছিল, ওর আমার আগেও প্রেম ছিল। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেনি। বিষয়টি আমি নিউজে দেখেছিলাম। এ ব্যাপারে আসলেই আমি কিছু জানি না।
আপনাদের সন্তান হচ্ছে বলার পর আপনি বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। আসলে ঘটনা কী ছিল।
আমি কখনই অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম না। ও আমাকে বাচ্চা নেওয়ার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে চাপ দিত। হঠাৎ করে একদিন ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর ওকে কল দিই। আমি তাকে বলি, এটা তো মিথ্যে কথা। এক কাজ করি দুজনে বলি, আমরা আসলে ভুল মনে করেছিলাম। আমাদের ভুল হয়েছে।
তখন সে আমাকে বলে, না এটা কেনো বলবো? তুমি আমার কাছে আসবা, তুমি প্রেগনেন্ট হবা। তা না করলে আমি বলব তুমি আমার বাচ্চার মা।
তার মানে মানসিকভাবেও নির্যাতন করা হত!
সবসময়। এ ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজনদের বহুবার জানানোও হয়েছিল।
আপনি বর্তমানে কই আছেন?
আমি এখন ক্যান্টেনমেন্টের বাসায় রয়েছি। দেশের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করছি।
সবকিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নোবেল যদি আপনার সঙ্গে আবার সংসার করতে চায়, তাহলে আপনি কী করবেন?
আমার মনে হয় না ও এটা চাইবে। এটা অনেকবার করা হয়েছে, অনেকবার সে মাফ চেয়েছে। কিন্তু দিনশেষে রেজাল্টটা শূন্য ছিল। আমি বললাম না, সে চাইলে ভালো থাকে—এক মাস, তিন মাস। তারপর আবার সে নেশার জগতেই ফিরে যায়। আমি ওকে ঘৃণা করি এমন না, ওর জন্য মায়া লাগে—একটা মানুষ কীভাবে নেশার জগতে বন্দি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
গায়ক নোবেলের বিবাহ বিচ্ছেদ!
নোবেলের বিরুদ্ধে ইথুন বাবুর মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ
অনুতপ্ত নোবেল, চাইলেন আরেকটা সুযোগ
‘তামাশা’য় কড়া জবাব পেলেন নোবেল
নোবেল বিতর্কে মুখ খুললেন শ্রীকান্ত আচার্য
‘সা রে গা মা পা’র ফাইনালে গাওয়া নোবেলের পরিবেশনা ফাঁস!
নুরসাত ফারিয়া ও নোবেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রুদ্রনীল ঘোষ
সারাবাংলা/এজেডএস