Wednesday 03 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০২৬ সালে জন্ম নেওয়া শিশুরাই ভবিষ্যতের জেনারেশন বেটা

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৩৭

২০২৬ সাল। পৃথিবী দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে— মানুষের জীবন, কাজ, শিক্ষা, এমনকি অনুভূতিও ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্রবাহে জড়িয়ে পড়ছে। এমন এক সময়ে জন্ম নিতে থাকা শিশুরা সমাজবিজ্ঞানীদের দেওয়া নতুন পরিচয় পাচ্ছে—জেনারেশন বেটা।
জেনারেশন আলফার পরবর্তী এই প্রজন্ম শুধু একটি নামই নয়; এটি ভবিষ্যতের সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তের প্রতিচ্ছবি।

বর্ণানুক্রমিক প্রজন্ম-ব্যবস্থার নতুন অধ্যায়

শুরুটা হয়েছিল বেবি বুমারদের দিয়ে। এরপর জেনারেশন এক্স, ওয়াই (মিলেনিয়াল), জেড, আলফা… আর এখন আসছে জেনারেশন বেটা—প্রযুক্তিনির্ভর সমাজের নতুন সন্তানরা। এ নামকরণ সম্পূর্ণ আধুনিক জনসংখ্যাবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারাবাহিকতার অংশ।

বিজ্ঞাপন

‘বেটা’ দিয়ে শুরু হওয়া এই নতুন অধ্যায় আবারও প্রমাণ করে— সময়ের সঙ্গে মানুষ বদলায়, সেই পরিবর্তনের ভাষা হিসেবে প্রজন্মের নামও নতুন করে জন্ম নেয়।

কেমন পৃথিবীতে বড় হবে জেনারেশন বেটা?

যে পৃথিবীতে আজ আমরা শুধু সম্ভাবনা দেখি, সেখানেই বেটা প্রজন্ম বাস্তব সুযোগ তৈরি করবে। তারা বড় হবে এমন এক সমাজে যেখানে—

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হবে তাদের নিত্যসঙ্গী

আজ আমরা AI ব্যবহার করি সহকারী হিসেবে; কিন্তু বেটা শিশুরা জন্মের প্রথম দিন থেকেই AI-কে দেখবে পরিবারের অংশ হিসেবে।

ঘুম ট্র্যাকিং AI শিশুর জন্য কাস্টমাইজড শেখার প্ল্যাটফর্ম। বাচ্চার আচরণ বিশ্লেষণ করে অভিভাবকের জন্য পরামর্শ দেবে এমন স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দৈনন্দিন জীবন— সবকিছুতেই মানুষের সঙ্গে মেশিনের সহযাত্রা হবে আরও গভীর ও স্বাভাবিক।

ডিজিটাল শিক্ষাই হবে তাদের প্রথম বিদ্যালয়

বই-খাতা নিশ্চয়ই থাকবে, তবে ‘প্রাথমিক শেখার মাধ্যম’—সেটা হবে স্ক্রিন, সিমুলেশন, অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (AR) ও ভিআর ক্লাসরুম। একজন বেটা শিশুর জন্য ভূগোল মানে শুধু মানচিত্র নয়— ভার্চুয়াল ট্যুরে আফ্রিকার সাভানায় দাঁড়ানো, কিংবা মহাকাশের কক্ষপথে ভেসে বেড়ানো।

তাদের শিক্ষকরা হবেন—মানুষ + AI। মানুষ আবেগ শেখাবে, আর AI শেখাবে বিশ্লেষণ, যুক্তি, ব্যক্তিগতভাবে মানানসই পড়া।

টেকসই প্রযুক্তির যুগে বেড়ে ওঠা

জেনারেশন বেটা এমন সময় জন্মাচ্ছে যখন জলবায়ু সংকট আর খবর নয়— এটি বাস্তবতা। সুতরাং তারা বড় হবে এমন সমাজে যেখানে:
বৈদ্যুতিক পরিবহন হবে প্রধান ধারা,
বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ হবে সাধারণ বিষয়,
খাদ্য, পানি, শক্তি—সবকিছুতেই ‘টেকসই’ চিন্তা থাকবে প্রথমে,
তারা ‘ইকো-স্মার্ট’ পৃথিবীতে জীবন শুরু করবে— যেখানে প্রযুক্তি শুধু বিলাস নয়, বরং বাঁচার পথ।

এক নতুন মানব–প্রযুক্তি সম্পর্কের সূচনা

জেনারেশন বেটাকে শুধু প্রযুক্তিবান্ধব বলা যথেষ্ট নয়; তারা হবে প্রযুক্তির সঙ্গে সমান অংশীদারিত্বে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম। মানুষ আর মেশিনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক—যা আমরা এখনো কল্পনা করছি—তাদের কাছে হবে খুবই স্বাভাবিক।

মানুষ + মেশিন = সহাবস্থান

এ প্রজন্মের জন্য রোবট মানে শুধু খেলনা নয়, বরং—
পাঠদানের সহকারী,
গৃহপরিচারক,
বন্ধু ও আকাঙ্ক্ষার প্রাথমিক অনুশীলন সঙ্গী,
এই সম্পর্ক মানবিকতা কমাবে না; বরং মানুষকে বাড়তি সক্ষমতা দেবে। যেমন—শিশুর আবেগ বোঝার জন্য স্মার্ট ডিভাইস অভিভাবককে সাহায্য করতে পারবে; শেখার দুর্বলতা শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক সমাধান দেবে।

জেনারেশন বেটার সামাজিক চরিত্র কেমন হতে পারে?

যদিও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়, তবুও বিভিন্ন গবেষণা ও বর্তমান প্রবণতার আলোকে কিছু ধারণা তৈরি করা যায়—

অত্যন্ত তথ্যপ্রবাহিত:
তথ্যের অভাব নয়, বরং তথ্যের গুণগত বাছাইই হবে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
এরা ছোটবেলায় শিখবে—প্রতিটি তথ্য যাচাই করতে হয়। ভুল তথ্য প্রতিরোধ হবে শিক্ষার অংশ।

সৃজনশীলতা-নির্ভর প্রজন্ম:
কারণ রুটিন কাজগুলো AI করে দেবে।
মানুষ বাকি থাকবে—ভাবতে, সৃষ্টি করতে, প্রশ্ন করতে। বেটা শিশুরা তাই নতুন ধারণা তৈরিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

বৈশ্বিক নাগরিক:
সীমান্ত, ভাষা ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা—এ প্রজন্মের কাছে আর ততটা বড় বিষয় হবে না। তারা ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন দেশের বাচ্চাদের সঙ্গে একই ভার্চুয়াল ক্লাসে পড়বে, গেম খেলবে, প্রজেক্ট করবে।

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সংবেদনশীল:
প্রযুক্তি-নির্ভর জীবনে আবেগের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। সেই কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের অনুশীলন, মাইন্ডফুলনেস, আবেগ ব্যবস্থাপনা—এগুলি হবে দৈনন্দিন কোর্স।

অভিভাবকত্বেও শুরু হবে নতুন যুগ

জেনারেশন বেটার আগমনে শুধুই পৃথিবী বদলাবে না, অভিভাবকত্বের ধারাও বদলে যাবে।

AI-চালিত প্যারেন্টিং সহায়তা

শিশুর ঘুম, খাওয়া, মনোভাব—সব বিশ্লেষণ করে অভিভাবকের জন্য সমাধান সাজিয়ে দেবে স্মার্ট সিস্টেম।

ডিজিটাল নিরাপত্তা হবে বড় চ্যালেঞ্জ

যত প্রযুক্তি বাড়বে, অনলাইন ঝুঁকিও বাড়বে। অভিভাবকদের নতুন প্রজন্মকে ‘ডিজিটাল এথিক্স’ শেখাতে হবে— কি দেখা উচিত, কী নয়; কোন তথ্য শেয়ার করা নিরাপদ, কোনটি নয়।

শিশুর স্বাধীনতা ও সংবেদনশীলতা

কারণ তাদের শেখা, খেলা থেকে শুরু করে যোগাযোগ—সবই হবে মিশ্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমে (অনলাইন + অফলাইন)। এখানে অভিভাবকের ভূমিকা হবে— ‘স্ক্রিন টাইম কমাও’ নয়; বরং ‘স্ক্রিনটাইম কীভাবে মানসম্মত করা যায়?’

জেনারেশন বেটার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

প্রতিটি প্রজন্মের মতোই বেটা প্রজন্মের সামনে থাকবে সম্ভাবনা এবং সংকট।

সম্ভাবনা

প্রযুক্তির মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ,
বহুভাষিক ও বৈশ্বিক সংস্কৃতিতে বড় হওয়া,
সৃজনশীল পেশার প্রতি ঝোঁক,
টেকসই সমাজ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা,
চ্যালেঞ্জ,
অতিনির্ভরতা ডিজিটাল ডিভাইসে,
গোপনীয়তা সংক্রান্ত ঝুঁকি,
মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা,
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের তীব্রতা,
— তবুও এ প্রজন্মের শক্তি থাকবে তাদের অভিযোজন ক্ষমতায়। পরিবর্তনই হবে তাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।

কেন জেনারেশন বেটা এত গুরুত্বপূর্ণ?

কারণ তারা এমন এক দিগন্তে দাঁড়িয়ে জন্ম নেবে, যেখানে মানবসভ্যতা নতুন পরিচয় নিয়ে এগোচ্ছে—প্রযুক্তিনির্ভর, সীমান্তহীন এবং টেকসই। বেটা শিশুরা শুধু প্রজন্ম পরিবর্তনের অংশ নয়; তারা ভবিষ্যতের নতুন সামাজিক কাঠামোর নির্মাতা।

জেনারেশন বেটা মানে—

ডিজিটাল ও মানবিকতার মেলবন্ধন,
সৃজনশীলতার নতুন সংজ্ঞা,
প্রযুক্তি-নির্ভর টেকসই পৃথিবী,
নতুন মূল্যবোধের সমাজ,
২০২৬ সালের শিশুদের দিয়ে শুরু হবে এই যাত্রা— যা মানব ইতিহাসের অন্যতম রূপান্তরমূলক অধ্যায় হিসেবেই তৈরি হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুক যে তথ্য দেয়া উচিত না!
৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৯

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর