Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলো ঘুড়ির দিন, আলোর দিন!


১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৩২

স্টাফ করেসপনডেন্ট

সন্ধ্যার আবহ শুরু হতেই, মাগরিবের আরও খানিকটা আগে থেকে, পুরান ঢাকার চেহারা পাল্টে গেলো খুব দ্রুত। সূত্রাপুর, তাঁতীবাজার, দয়াগঞ্জ, গেণ্ডারিয়া, বাংলাবাজার, ধূপখোলা মাঠ, সদরঘাট, কোর্ট-কাছারি এলাকার ওদিকটার আকাশে নেমে এলো অন্ধকার নয়, বিচ্ছুরিত আলোর বন্যা। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য স্পটলাইট আকাশে উঠে, পরস্পরের শরীরকে ভেদ করে, ডানেবাঁয়ে ক্রমাগত হেলে জানিয়ে দিলো- ‘এসে গেলো উৎসবের দিন!’

বিজ্ঞাপন

বিচ্ছুরিত ওই সাদা আলোর মধ্যে অগুণিত তারাবাতি রঙিন সজ্জা লেপ্টে দিয়ে দৃশ্যকে করলো আরও অনবদ্য। যেন পুরো মহল্লা ধরে একঝাঁক আলোরশিল্পী নিপুণ দক্ষতায় আকাশের গায়ে বুনে যাচ্ছে আলোর চাদর। যে যার মতো, অথচ সামগ্রিকভাবে পরিপাটি এবং গোছালো।

সাময়িক প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ফানুশও যে দু’একটা উড়লো না- তা নয়। এই ভিজ্যুয়ালে আবহসংগীত হিসেবে থাকলো পটকাবাজি আর অসংখ্য মিউজিক সিস্টেম থেকে ছিটকে আসা অনেকটা অ্যামেচার ডিজেদের কারসাজি।

এর আগে দুপুর থেকে প্রত্যেক ছাদে নাটাই হাতে সেই সব কিশোর-কিশোরীর ভীড় ছিলো, যারা সপ্তাহখানেক আগেই সুতায় মাঞ্জা দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছিলো। নানান রঙের-আকৃতির ঘুড়ি আকাশটাকে করে তুললো প্রতিযোগিতামুখর।

ভোকাট্টা… কাটাঘুড়ি ছিটকে পড়লো পড়শির ছাদে, গাছের ডগায় আর নিচের রাস্তায়। ওপরে যখন ঘুড়ির উৎসব-আলোর বিচ্ছুরণ, নিচের রাস্তায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ যানজট।

এরও আগে শাখারিবাজারে ঘোরাঘুরির সময় যে সব ঘুড়িবিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো, তাদেরকে বেশ খুশিই দেখা গেছে এ বছরের ঘুড়ির পসরায়। ‘সাকরাইন’-কে উপলক্ষ করে শাখারিবাজারের প্রায় দোকানের সামনেই হরেক রঙের ঘুড়ি ঝোলে। চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, ঈগল, কামরাঙা, আগুনপাখির পাশাপাশি এবার ছিলো সালমান খানের ছবি আঁকা ‘টিউবলাইট’ ঘুড়িও!

বিজ্ঞাপন

উৎসবের দিন, ১৫ ডিসেম্বর রাত ন’টার দিকে সূত্রাপুরের গলির মোড়ে কয়েকজন বিস্মিত তরুণকে পাওয়া গেলো, যাদের চোখেমুখে গভীর বিস্ময়! ‘সাকরাইন তো দিন দিন ছড়ায়ে পড়তেছে’ মর্মে যারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন, ওই এলাকায়ই তাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা। তাদের অভিজ্ঞতা- এখনকার ‘সাকরাইন’ উৎসবে সময়ের প্রয়োজনে এসেছে খানিকটা বদল!

মূলত এটি ঘুড়ি উৎসব হলেও, গত কয়েকবছর ধরে সাকরাইনের গাঢ় জাঁকজমকটা শুরু হয় সন্ধ্যার পর থেকে। যখন কিশোরের হাতে নাটাই উল্টো দিকে ঘুরছে, আকাশ থেকে অজস্র ঘুড়ি নেমে আসছে ধীরে, নামছে অন্ধকার, জ্বলে উঠছে রঙিন আলো! সাউন্ড সিস্টেমে মিউজিকের ভলিউম আরও বাড়ে তখন। এলাকার দুরন্ত কিশোর বলে পরিচিত যারা, তারা মুখে কেরোসিন নিয়ে ফায়ারওয়ার্কসের কসরত দেখায়।

সাকরাইনের ইতিহাস অনেক পুরনো। পঞ্জিকামতে, বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন উদযাপিত হয় পৌষসংক্রান্তি। বর্তমানে ‘পৌষসংক্রান্তি’ শুধু ‘সংক্রান্তি নামে পরিচিতি পেয়েছে। পুরান ঢাকার মানুষ শব্দটিকে খানিকটা পরিমার্জিত আকার দিয়ে ডাকে ‘সাকরাইন’ বলে। শোনা যায়, পৌষের শেষে জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। মহল্লাশুদ্ধ জামাইরা ঘুড়ি ওড়ালে সেসব দেখতো গ্রামবাসী।

কথিত আছে, মুঘল আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব প্রসার পেয়েছিলো নবাবদের হাত ধরে। ১৭৪০ সালে নবাব নাজিম মুহাম্মদ খাঁ পৌষ সংক্রান্তিতে ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব প্রচলন করেন।

শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ সরাসরি দেখুন সারাবাংলা.নেটে

 

ছবি: নূর

সারাবাংলা/কেবিএন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর