বন্ধু—এই ছোট্ট শব্দটার ভেতরেই লুকিয়ে আছে জীবনের সবচেয়ে গভীর, রঙিন আর অদ্ভুত সুন্দর সম্পর্ক। কোনো রক্তের বাঁধনে নয়, তবুও আত্মার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠে যে, সে-ই বন্ধু। জীবনের প্রতিটি মোড়ে, আনন্দে, দুঃখে, উত্তাপে, ঝড়ে, খুনসুটিতে—বন্ধুরা থাকে পাশে। কখনো হাতে হাত রেখে, কখনো চোখে চোখ রেখে, আবার কখনো নিঃশব্দে পাশে বসে থেকে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বন্ধুত্ব মানেই শুধু ক্লাসরুম, টিফিন টাইম কিংবা রিকশা ভ্রমণ নয়। এখানে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে চায়ের দোকানে বসে গল্প করার মধ্য দিয়ে, ফুটবল খেলার সময় বল কাড়াকাড়ির মধ্যে দিয়ে, কিংবা সন্ধ্যার আড্ডায় পিঠে চাপড় দিয়ে বলা ‘আসি ভাই, দেখা হবে’— এইসব মুহূর্তগুলোতেই।
ছোটবেলার সেই প্রথম বন্ধুটি, যে হয়তো হিন্দি সিরিয়ালের নায়কের মতো অভিনয় করতো স্কুলের পেছনের মাঠে, কিংবা কলেজে উঠে যে বন্ধু নোট না দিলেও নিজের কাঁধে মাথা রাখার আশ্বাস দিয়েছে—তাদেরই স্মৃতিতেই গাঁথা থাকে আমাদের তারুণ্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু? সে তো হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে গভীর অধ্যায়ের সহচর।
বন্ধুত্বের রঙ একেক সময় একেক রকম। কখনো উজ্জ্বল, কখনো ম্লান, কিন্তু কখনোই নিঃশব্দ নয়। কিশোর বয়সে বন্ধুরা হয়ে ওঠে জীবনের সবচেয়ে বড় পরামর্শদাতা, প্রেম-ভালোবাসার প্রথম শ্রোতা। আবার পরিণত বয়সে বন্ধুরাই জীবনের ভার কমিয়ে দেয় এক কাপ চা আর একটুখানি বোঝাপড়ার মাধ্যমে।
বন্ধুত্ব দিবস আসলে কোনো নির্দিষ্ট দিনের নয়— এটা প্রতিদিনের অনুভব, প্রতিদিনের চর্চা। তবে বিশেষ এই দিনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়, জীবনের ব্যস্ততা ভুলে একবার বলা— ‘ভাই, তুই না থাকলে আমি কি করতাম!’ কিংবা ‘তোর সঙ্গে কথা না হলে আমার দিনটা ঠিক জমে না।’— এই শব্দগুলোই তো বন্ধুত্বের আসল জাদু।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন বন্ধুত্ব একটা ‘রিঅ্যাকশন’ বা ‘স্টোরি মেনশন’-এ সীমাবদ্ধ, তখন বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব আরও দরকার, আরও জরুরি। কারণ বন্ধু মানেই তো জানার আগেই বুঝে ফেলা, বলার আগেই শুনে ফেলা।
বন্ধুত্ব দিবসে তাই একটা পুরনো নম্বরে ফোন করে বলতেই পারো— ‘দোস্ত, মনে পড়ছে তোর কথা।’ এই একটুখানি খোঁজই হয়তো আবার জোড়া লাগিয়ে দেবে ছিড়ে যাওয়া বন্ধনের সুতোগুলো।