টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর নগরজীবন কিছুটা থমকে গেছে। অফিসগামী থেকে শুরু করে দোকানপাটের ক্রেতা— সবাইকে কমবেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন স্কুলফেরত শিশুদের অভিভাবকরা।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে দেখা যায়, বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় স্কুলের গেটের সামনে ভিড় জমিয়েছেন অভিভাবকেরা। কেউ ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ আবার রিকশার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি কাজে আসছে না। টানা বর্ষণে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় রিকশা ও ভ্যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অনেক শিশুই ভিজে ভিজে ঘরে ফিরছে।
অভিভাবক শারমিন আক্তার জানান, তার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল থেকে ফিরতে গিয়ে প্রতিদিনই ভিজে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শিশুরা বৃষ্টি পেলেই ভিজতে চায়। আগের মতো যদি এক-আধদিন হতো, সমস্যা ছিল না। কিন্তু টানা ভিজতে ভিজতে এখন ওর ঠান্ডা লেগেছে, কাশি হচ্ছে।’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন উত্তরা এলাকার গৃহিণী নাসরিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘রিকশা পাওয়া যায় না। পেলেও ভাড়া দ্বিগুণ। বাচ্চাকে নিয়ে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঘরে ফিরতে ফিরতে ভিজেই যায়।’
শিশুরা স্বভাবতই বৃষ্টিকে উপভোগ করে। তবে চিকিৎসকেরা এ সময় অতিরিক্ত সাবধানতার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাশেদুল হক বলেন, ‘টানা ভিজে থাকলে শিশুদের মধ্যে ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাওয়ার সময় রেইনকোট ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ভেজা কাপড় দ্রুত বদলে শুকনা কাপড় পরানো জরুরি।’
অন্যদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। তাতে স্কুলগামী রিকশা ও গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মায়েরা বলছেন, সন্তানকে ভিজে যেতে না দিতে গিয়ে প্রতিদিনই তাদের নতুন এক বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এড়াতে নগর পরিকল্পনাবিদরা দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে রাজধানীতে বর্ষার মৌসুমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
টানা বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়ছে, তেমনি স্কুলফেরত শিশু ও তাদের মায়েদের কষ্টও বেড়েছে বহুগুণ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আরও কয়েকদিন চলতে পারে এই বৃষ্টি। তাই এখনই সচেতন না হলে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।