Thursday 27 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সঙ্গীর শরীরের উষ্ণতা হয়ে ওঠে ঘুমের সহযাত্রী

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৩২

অনিদ্রার চাপ একা সামলানো কঠিন। মাঝরাতে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে যখন ক্লান্তি বাড়ে, তখন মনে হতে পারে— কেউ পাশে থাকলে হয়তো একটু ভরসা মিলত। আশ্চর্যের বিষয় হলো, গবেষকরাও বলছেন একই কথা। সঙ্গীর উষ্ণ উপস্থিতি, তার শ্বাসের ছন্দ, এমনকি তার দেহের তাপমাত্রাও ঘুমের মান বাড়াতে পারে।

মানসিক ও শারীরিক অন্তরঙ্গতা—সম্পর্কের প্রাণ

যে সম্পর্ক যত আন্তরিক, সেখানে শারীরিক ও মানসিক সংযোগ ততই গুরুত্বপূর্ণ। দম্পতিরা একসঙ্গে সময় কাটালে যেমন ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, তেমনি একসঙ্গে ঘুমানোও সেই বন্ধনকে শক্ত করে। শুধু রোমান্টিক কারণেই নয়—এর পেছনে আছে অনেক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও।

বিজ্ঞাপন

৬০ শতাংশ দম্পতি একসঙ্গে ঘুমান

এক সমীক্ষায় পাওয়া গেছে— প্রায় ৬০% দম্পতি প্রতিদিন বা বেশিরভাগ রাতে একসঙ্গে ঘুমান। এর মধ্যে আছেন যৌনবৈচিত্র্যের দম্পতি, বয়স্ক দম্পতি, এমনকি যারা অসুস্থতার মধ্যেও সঙ্গীর পাশে ঘুমান। এ থেকে বোঝা যায়, একসঙ্গে ঘুমানো একটি বৈশ্বিক ও মানবিক অভ্যাস, যা বয়স, সম্পর্ক বা সামাজিক পরিচয় ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সঙ্গীর পাশে ঘুমালে কেন ঘুম ভালো হয়?

সঙ্গীর উপস্থিতি শুধু মানসিক সান্ত্বনা দেয় না, শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

১. স্ট্রেস হরমোন কমে: ঘুমাতে গেলে শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন কমতে শুরু করে। সঙ্গীর কাছে থাকলে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ঘটে।

২. ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়ে: ঘনিষ্ঠতার কারণে শরীরে সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিন বাড়ে— সেরোটোনিন মন ভালো করে, অক্সিটোসিন আপন করে নেয়। এ দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবে ঘুম আরও গভীর হয়।

৩. শরীর-মন শান্ত হয়: সঙ্গীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ, হৃদস্পন্দনের ছায়া, তার শরীরের উষ্ণতা— সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের শান্ত পরিবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি কার্যকর হতে পারে।

যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য বাড়তি সুবিধা

অনিদ্রার মূল সমস্যা হলো ‘ঘুমের লেটেন্সি’— অর্থাৎ ঘুমিয়ে পড়তে অস্বাভাবিক বেশি সময় লাগা। কিন্তু গবেষণা বলছে: একই বিছানায় ঘুমানো দম্পতিরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। কারণ সঙ্গীর উপস্থিতিতে স্ট্রেস কমে, শরীরের উত্তেজনা প্রশমিত হয়, এবং মস্তিষ্ক ‘নিরাপত্তা’ অনুভব করে।

যারা রাতে একা থাকলে উদ্বিগ্ন বা অস্থির বোধ করেন, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে।

২০২২ সালের গবেষণা: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

স্লিপ জার্নালে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে—
সঙ্গীর পাশে ঘুমালে মানসিক চাপ কমে,
বিষণ্নতা ও উদ্বেগের উপসর্গ হ্রাস পেতে পারে,
অনিদ্রা, স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদির ঝুঁকিও কমে,
অর্থাৎ, ঘুম শুধু শরীরের জন্য নয়; সম্পর্ক, মন এবং মানসিক স্থিতিশীলতার জন্যও এটি এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

একসঙ্গে ঘুমালে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে

শুধু ঘুম নয়— একই সময়ে একই জায়গায় থাকার নিয়মিত অভ্যাস দম্পতির সম্পর্ককে আরও উষ্ণ করে।

দেহ-মন-আধ্যাত্মিক সংযোগ

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শারীরিক স্পর্শ, উষ্ণতা, দিনের শেষে একসঙ্গে থাকা— এগুলো মিলেই মানসিক সংযোগ গভীর করে। একে বলা যেতে পারে এক ধরনের ‘নিঃশব্দ যোগাযোগ’, যা সম্পর্কের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।

অক্সিটোসিন— ভালোবাসার হরমোন

৭৭৮ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে— সঙ্গীর পাশে ঘুমালে অক্সিটোসিনের নিঃসরণ বাড়ে। যা…
ঘুম ভালো করতে,
স্ট্রেস কমাতে,
সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে বড় ভূমিকা রাখে।
অক্সিটোসিনকে অনেকে বলেন ‘বন্ডিং হরমোন’ বা ‘কাডল হরমোন’— ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক।

ভালো ঘুম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টার ঘুম শুধু আদর-ভরসার জন্য করি না। ঘুম আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সারিয়ে তোলে। ভালো ঘুম না হলে…
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে,
হার্টের সমস্যা বাড়তে পারে,
ওজন বাড়ে বা কমতে থাকে,
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়,
শেখার ক্ষমতা কমে,
মানসিক চাপ বাড়ে,
অর্থাৎ, দিনের সুস্থতা নিশ্চিত করতে রাতে ভালো ঘুম অপরিহার্য।

সব দম্পতির জন্য কি একই বিছানা উপযোগী?

সব সময় নয়। কিছু ক্ষেত্রে আলাদা ঘুমানোও কার্যকর হতে পারে…
একজন স্নোর করলে,
কেউ অতিরিক্ত নড়াচড়া করলে,
ঘুমের সময়সূচি ভিন্ন হলে,
তবে এসব সমস্যা ঠিক করা গেলে বা মানিয়ে নেওয়া গেলে, একসঙ্গে ঘুমানো নিঃসন্দেহে উপকারী।

সঙ্গীর পাশে শোয়ার অভ্যাস কীভাবে করবেন?

১. একই সময়ে বিছানায় যান: দু’জনের ঘুমানোর সময় কাছাকাছি হলে শরীরের ছন্দ মিলতে থাকে।

২. ঘরটি আরামদায়ক রাখুন: নরম আলো, পরিষ্কার বিছানা, স্নিগ্ধ গন্ধ—ঘুমের পরিবেশকে আরও শান্ত করে।

৩. দিনের শেষে ‘উইন্ড-ডাউন’ সময় রাখুন: একসঙ্গে কথা বলা, বই পড়া বা হালকা গান—মনকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে।

৪. আবেগ নিয়ে কথা বলুন: দু’জনের অনুভূতি ও সমস্যার বিষয়ে কথা বললে মানসিক ভার কমে এবং ঘুম সহজ হয়।

শেষ কথা

ঘুম শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়— এ এক গভীর আবেগের জায়গা। সঙ্গীর পাশে ঘুমানো মানে নিরাপত্তা, শান্তি ও ভালোবাসার অনুভূতি। গবেষণা বলছে, এটি শুধু মনকে নয়, শরীরকেও সুস্থ রাখে। যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তারা চাইলে সঙ্গীর পাশে ঘুমানোর অভ্যাস শুরু করতে পারেন।

ভালোবাসা, আলো, আরাম— সব মিলেই হয়তো আপনার রাতগুলো আবার গভীর, মিষ্টি ও শান্ত হয়ে উঠবে।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি
বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর