নগর চাষীর কলাম (পর্ব-১)
২৭ নভেম্বর ২০১৭ ১২:৩৮
শাওন মাহমুদ
একবার কে- নাইন কুকুর সম্পর্কে জানবার ইচ্ছে জেগেছিলো। ওয়েব সাইটটিতে ঢুকতেই প্রথম লাইনে লেখা, আপনি কি আপনার পরিবারে একজন সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য প্রস্তুত? যদি মানসিকভাবে তাতে প্রস্তুত হন শুধু তাহলেই এই জাতীয় কুকুর বাসায় পুষবার জন্য এগোতে পারেন। নাহলে নয়। থমকে গিয়েছিলাম লাইনগুলো পড়ে। আমি পুরোদস্তর ঘরকন্যা করা মানুষটি চাষী হয়ে উঠবার পিছনে এই কথাগুলো বেদবাক্য যেন।
ছেলেবেলা থেকে প্রকৃতি আমার একান্ত ভালোবাসার বিষয়। অবাক বিস্ময়ে প্রকৃতির খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করা আমার নেশা। ভালোবাসা শুধু মানুষের সাথেই ঘটে তা নয়, প্রকৃতির সাথেও ঘটে থাকে বলে আমি বিশ্বাস করি। ঘরে, উঠোনে, বারান্দায় বা ছাদে বাগান করবার জন্য সবচেয়ে আগে ভালোবাসা দরকার।
একটি গাছ তার সম্পূর্ণ আয়ুটুকু আপনার সাথে কাঁটাবে। তাই যে কোন গাছকে ঘরে আনবার আগে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে যে আপনি তাকে তার সারা জীবনের জন্য দত্তক নিতে যাচ্ছেন। ইচ্ছা থাকলে উপায়গুলোও বের হয়ে আসে। ঠিক তেমনই আমার ছাদে বাগান করবার ইচ্ছাটা খুব প্রকট আকার ধারণ করেছিল গত পাঁচ বছর আগে। এর আগে অল্প কিছু টবে পাতাবাহার গাছ আমার ছিল। কিন্তু এক প্রিয় বন্ধুর একতলা বাসাটি ডেভেলপারকে হস্তান্তর করবার সময় ও বেশ কয়টি গাছ আমাকে উপহার দিলো। তখন উপায় বের হয়ে গিয়েছিল চাষী হওয়ার।
উপহার হিসেবে গাছগুলোকে আমি দত্তক নিতেই চেয়েছিলাম। নিজে সেধে গিয়ে ইচ্ছা জানিয়ে এসেছিলাম। তখন পর্যন্ত জানতাম সে আবার এগুলোকে ফেরত নিবে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস যাওয়ার পর সে আমার চাষাবাদে মুগ্ধ হয়ে গাছগুলোকে সারাজীবনের জন্যই আমার চাষী পরিবারে দান করে গিয়েছিল।
গত পাঁচ বছরে আমি নিজে নিজে চাষাবাদের খুঁটিনাটি শিখেছি। চাষাবাদ সবসময়ই ঋতুভিত্তিক হয়ে থাকে এবং তা মাটি, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে না শিখলে কিছুতেই সফলতা আসে না।
আমার ছাদবাগানে অনেক রকমের গাছ আছে। প্রত্যেক গাছের একদম ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র। একেবারে মানুষের মতন। আমি ধীরে ধীরে আমার জানা চাষাবাদের সবটুকু গল্প বলবো। ঠিক যতটুকু শিখতে পেরেছি ততটুকু।
আমার এই চাষী পরিচয়ের নাম দিয়েছি আমি- ভালোবাসার চাষাবাদ। ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে বিষেশজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। ভালোবাসার চাষে কোন ছক বাঁধা তালিকা নেই। আপনার যদি মনে হয় একটি সবুজ প্রাণ আপনার সাথে বেড়ে উঠবে, সেই চাওয়াতে সবচেয়ে আগে ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসবার উপায় বের করে ফেলা কোন সমস্যাই নয়।
ছাদ বাগানের খুঁটিনাটি নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। আমার হাত ধরে আপনার হাতে কলমে ভালোবাসার চাষী হয়ে উঠবার জন্য অপেক্ষায় থাকবো। পড়ার টেবিলে বা বারান্দার এক কোণায় অথবা ঘরের জানালায় একটি গাছও যদি আপনার পরিবারে যুক্ত করতে পারি, তাতেই চাষীর স্বার্থকতা।
গাছকে ভালোবাসুন। গাছকে পরিবারে দত্তক নিন। আমি বিশ্বাস করি নিশ্চয় একদিন আমার গলায় গলা মিলিয়ে আপনি গেয়ে উঠবেন, চাষী পরিবার সুখী পরিবার।
(চলবে)
নগর চাষীর কলাম (পর্ব- ২)
নগর চাষীর কলাম – পর্ব ৩ – ছাদবাগানে লাউ চাষ
নগর চাষীর কলাম – পর্ব ৪ – আমার ‘বেগুনী প্রজাপতি’র গল্প
নগর চাষীর কলাম – ৫ (শশা গাছ আমায় নিরাশ করেনি!)
পর্ব-৬ [ছাদের বাগানে সরিষা শাক- মুঠো মুঠো সুখ]
পর্ব-৭ [ছাদবাগানে লাল শাক- লালে রাঙা মুগ্ধতা!]
সারাবাংলা/এসএস