ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রাজধানীর ৩৬ ওয়ার্ডের ৫ লক্ষাধিক মানুষ
২৬ জুলাই ২০১৯ ২২:৩৫
ঢাকা: রাজধানীর নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুর ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এই ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গুর ঝুঁকি মোকাবিলায় কোনো উদ্যোগ বা কার্যক্রম নেই। এমনকি মশা নিধনে এসব ওয়ার্ডের জন্য কোনো আর্থিক বরাদ্দ নেই।
দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার তিন বছর হয়ে গেলেও এখনও ৩৬টি ওয়ার্ডে প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়নি। যে কারণে সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকার পরও ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দারা কোনো ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন নতুন ওয়ার্ডের বিপরীতে কোনো বরাদ্দ ও কার্যক্রম না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় যেসব নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে সেগুলোতে আপাতত আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই। হাইকোর্টের নির্দেশে শুক্রবার থেকে রাজধানীতে শুরু হওয়া মশক নিধন কার্যক্রমেও নতুন ওয়ার্ডগুলো রাখা হয়নি।’
কী কারণে নতুন ওয়ার্ডে কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এটি সময়ের ব্যাপার। এছাড়া চলতি জুলাই শেষে নতুন বাজেট হবে । তখন এসব নতুন ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে এবং কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) গত অর্থবছরে ২৬ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মশক নিধনে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট এখনও ঘোষনা করা হয়নি। ডিএসসিসিতে মশার ওষুধ ছিটানোর ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এরমধ্যে হস্তচালিত, ফগার ও হুইল ব্যারো মেশিনের প্রায় অর্ধেকই অচল। অন্যদিকে ডিএনসিসিতে হস্তচালিত, ফগার, হুইল ব্যারো, ভেহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মিলিয়ে মশা নিধনের মেশিন রয়েছে ৬৫৩টি। দক্ষিনের মত উত্তর সিটি করপোরেশনের মেশিনও বেশিরভাগ নষ্ট।
ডিএনসিসির মশক নিধনকর্মী রয়েছেন ২৭৯ জন এবং ডিএসসিসিতে ৮২৯ জন। মশক নিধন কর্মীদের নিয়ম করে সকালে লার্বিসাইট এবং বিকেলে এডাল্টি সাইট ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও এসব কর্মীরা কাজ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএনসিসি এলাকায় নিয়মিত গৃহকর পরিশোধ করে এমন বাড়ির সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২টি। আর ডিএসসিসিকে গৃহকর পরিশোধ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার বাড়ি।
তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো ধরনের ট্যাক্স নিই না।’
যেসব ওয়ার্ডে মশা নিধনের কোনো উদ্যোগ নেই, সেগুলো হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪। এসব ওয়ার্ড বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়ন ভেঙ্গে হয়েছে।
অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন ওয়ার্ডগুলো হলো ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫। শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়ন ভেঙে এসব ওয়ার্ড হয়।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর অবিভক্ত সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে বছর ২০১২ সালের জুলাইয়ে সিটি করপোরেশনকে দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। ২০১৬ সালে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঢাকায় বেড়ে গেলে একই বছরের ৯ জুন প্রশাসনিক পুর্নাবন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) রাজধানীর আশপাশের ১৬টি ইউনিয়নকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন
ডেঙ্গুজ্বর যেন আল্লাহ আর কাউকে না দেয়: অর্থমন্ত্রী
সাড়ে ৩ লাখ ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সম্পূর্ণ কাল্পনিক: সাঈদ খোকন
ডেঙ্গুর মহামারিতেও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেই: রিজভী
ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে কিনা, জানতে চান আদালত
ডেঙ্গুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
ডেঙ্গুতে অসচেতনতা: ১৫ আবাসন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
ডেঙ্গু নিয়ে সরকারি তথ্যে গড়মিল!
গুজব ও ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন: পিএমও
একদিনে হাসপাতালে ৫৬০ ডেঙ্গু রোগী, শুধু ঢামেকেই ১৪৫
মশার ওষুধ কাজ করছে না দেখেই এত ডেঙ্গু রোগী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জুলাই মাসেই ঢামেকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ৯১১, মৃত্যু ৩ জনের