Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফণীর প্রভাবে দুই ফুট বেড়েছে পশুর নদীর পানি


৩ মে ২০১৯ ১৯:২৯

খুলনা: ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশুর নদীর পানি প্রায় দুই ফুট বেড়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে নদীতে। ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের হোগলা, কয়রা ইউনিয়নের গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশীর গাজীপাড়া, বিনাপানি, গাব্বুনিয়া, দক্ষিণ বেদকাশির জোড়শিং, চোরামুখা, আংটিহারা, গোলখালী, খাশিটানা, মহেশ্বরীপুরের সরদারঘাট, পাইকগাছা উপজেলার শিবসা পাড়ের গড়ইখালী ইউনিয়নটি গড়ইখালী, দাকোপের বাণিশান্তা, বাজুয়া, কামারখোলা, সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, জেলেখালী, জয়নগর, গুনারী, বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা। এসব এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার উপকূলবর্তী চার উপজেলার ১ লাখ ১১ হাজার পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর ৩টায় জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মোংলা বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ক্রমশ এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। সাগর থেকে ধেয়ে আসা এ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকায়গুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। ’

শুক্রবার (৩ মে) খুলনার উপকূলজুড়ে ঘুর্ণিঝড়ের আতঙ্ক থাকলেও জীবনযাত্রা থেমে নেই। তবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে বাড়ছে পানির উচ্চতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের তীব্রতাও। দুপুরের পর থেকে খুলনায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সদস্য, ত্রাণ শাখার প্রধান সহকারী শাহানা বেগম দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘খুলনার কয়রা উপজেলার ১১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার, দাকোপ উপজেলার ৯৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫০ হাজারটি পরিবার এবং পাইকগাছা উপজেলার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১০ হাজার ও বটিয়াঘাটা উপজেলার ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১ হাজার পরিবারকে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এসব উপজেলার অন্যান্য বাসিন্দাদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।’

তবে, ঝড়ের তীব্রতা শুরু না হওয়ায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা অনেকেই কেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। আবার নতুন করে অনেক পরিবার কেন্দ্রে আসছে।

দাকোপ উপজেলার ৪নং খোনা খাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোনা কে বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কয়রা ও পাইকগাছার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আনা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়। পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য চলছে মাইকিং।

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘দুপুরের দিকে কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন। তবে, পর্যাপ্ত জায়গা, পানি, টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই আসতে চান না। খুলনা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। কেউ কেউ সেচ্ছায় আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন। যারা আসতে চাচ্ছেন না তাদের পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে আনছেন। তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার বেশ কিছু দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে।

বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জের কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধিন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, কেয়ারগাতি, চাকলা, বিছট, কাকবসিয়া, কোলা, হাজারাখালী, ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, চন্ডিতলা ও বুধহাটার তেঁতুলতলা, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, খারাট, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, শুক্রবার খুলনার আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও বাতাসের তীব্রতা কিছুটা বেড়েছে। মধ্যরাতে ফণী আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনায়।

উল্লেখ্য, খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে। নৌকা, ট্রলারসহ ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সেনা ও নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে খুলনার নয়টি উপজেলার সকল ইউনিয়নে একটি ও প্রতি উপজেলা সদরে পাঁচটিসহ মোট ১১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/একে

আরও পড়ুন

উপকূলে ফণীর প্রভাব: ঝড়-বৃষ্টি শুরু
ফণী নিয়ে যা জানাচ্ছে সাইক্লোন.কম
ফণীতে সতর্ক দেশের বিমানবন্দরগুলো
উপকূলীয় ৯ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
ফণী: পিরোজপুরের নদীগুলোতে পানি বাড়ছে
ফণীর প্রভাবে যাত্রীশূন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
ফণীর প্রভাবে দুই ফুট বেড়েছে পশুর নদীর পানি
‘ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে’
শক্তি সঞ্চয় করছে ফণী, উপকূলের ১৯ জেলায় প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বোরো ধান কেটে ফেলার পরামর্শ
ঘূর্ণিঝড় ফণী: সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম
ফণী মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১২ পদক্ষেপ, হটলাইন চালু

খুলনা ঘূর্ণিঝড় ফণী পশুর নদী ফণী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর