যে পাঁচ কোম্পানির দুধে মিলেছে অ্যান্টিবায়োটিক
১৩ জুলাই ২০১৯ ১৬:২০
ঢাকা: পাঁচ কোম্পানির প্যাকেটজাত দুধসহ ১০ ধরনের দুধের নমুনায় ফের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার। দুধের ১০টি নমুনার ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক মিলেছে।
বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট এবং ইগলু ম্যাংগো দুধের নমুনার ওপর গবেষণা চালায়। এর মধ্যে তিনপ্রকার দুধে চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, ছয়টিতে তিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও একটিতে দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। এছাড়া রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে সংগ্রহ করা খোলা দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।
দুধের পাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হলো অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লিভোফ্লক্সাসিন। এর মধ্যে আগের পরীক্ষায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন ছিল না। এবার ওই দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নতুন করে মিলেছে।
এ বিষয়ে ঢাবির বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ১৩ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা এ পরীক্ষাটি আবার সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও আগের ৫টি কোম্পানির পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত ৭টি নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা সংগ্রহ করি। এরপর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর দেখা যায়, ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।
গত ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মানবদেহে কী প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে আ ব ম ফারুক বলেছিলেন, বিভিন্ন সময় আমরা বলে থাকি, অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করছে না বা অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। তো কাজ করছে না এসব কারণে। কারণ শরীরের মধ্যে অলরেডি অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকে আছে। এ কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আমরা যখন খাই তখন আর কাজ করে না।’
মানহীন অন্যান্য নমুনাও: আগের পরীক্ষাতে ৮টি ঘিয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। এগুলো হলো- আড়ং, বাঘাবাড়ি, প্রাণ, মিল্কভিটা, মিল্কম্যান, সমির এবং টিনে বিক্রি হওয়া নামবিহীন দুটি নমুনা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ঘিতে জলীয় উপাদান সর্বোচ্চ ০.৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও সব নমুনাতেই ০.৭৫-১.১৭ শতাংশ পাওয়া যায়। এছাড়া আয়োডিন ভ্যালুতে সবগুলো নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলের জুসের ১১টি ব্র্যান্ডের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইয়ের শর্তপূরণ করে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। সবগুলোতেই ক্ষতিকর কৃত্রিম মিষ্টিকারক সাইক্লামেট ব্যবহার হয়েছে। যেসব পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেগুলো হলো- স্টারশিপ ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সেজান ম্যাংগো ড্রিংক, প্রাণ ফ্রুটো, অরেনজি, প্রাণ জুনিয়র ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, লিটল ফ্রুটিকা ম্যাংগো ফ্রুট ড্রিংক, সানড্রপ, চাবা রেড এপল, সানভাইটাল নেকটার ডি ম্যাংগো, লোটে সুইডেন্ড এপল ড্রিংক এবং ট্রপিকানা টুইস্টার।
বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে প্রতীয়মান এমন ১০টি পামওয়েল নমুনার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলা হলো- মিজান এবং টিনে খোলা বিক্রি হওয়া ৯টি নমুনা। বিএসটিআই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী, পাম অয়েলে স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু, ইনসল্যুবল ইমপিউরিটিজ, পারক্সাইড ভ্যালু ও জলীয় উপাদান সবগুলো নমুনাতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ বিবেচনায় ১০টির সব নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।
সরিষার তেলের ৮টি বিভিন্ন নামের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলো হলো- রূপচাঁদা, রাঁধুনি, তীর, ফ্রেশ, পুষ্টি, সুরেশ, ড্যানিশ এবং বসুধা। বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সরিষার তেলের স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু যত থাকার কথা তার থেকে বেশি রয়েছে ৮টি নমুনার তিনটিতে। এছাড়া পারক্সাইড ভ্যালু ১০ থাকার কথা থাকলেও ৪টি নমুনাতে এর পরিমাণ ছিল প্রায় দ্বিগুণ। আর রিলেটিভ ডেনসিটির পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল ৪টিতে। এছাড়া জলীয় উপাদানও বেশি পাওয়া গেছে ৮টি নমুনার সবগুলোতেই।
সয়াবিন তেলের ৮টি নমুনার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেগুলো হলো- রূপচাঁদা, ফ্রেশ, পুষ্টি, তীর, এসিআই পিওর, ভিওলা, মুসকান এবং মিজান। বিএসটিআই স্টান্ডার্ড অনুযায়ী তেলের এসিড ভ্যালু যতটুকু থাকার কথা দুটি নমুনায় তার থেকে বেশি পাওয়া গেছে। স্যাপনিফিকেশন ভ্যালুর বিবেচনায় ৮টির মধ্যে ৭টি নমুনা মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। পাঁচটি নমুনাতে পারক্সাইড ভ্যালু স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যায় ওই গবেষণায়।
সারাবাংলা/একে
আরও পড়ুন
বাজারের ৯৬টি তরল দুধের ৯৩ নমুনাতেই ক্ষতিকর উপাদান
দুধ নিয়ে প্রাণের বিজ্ঞাপনে হাইকোর্টের অসন্তোষ
দুধ-দই বিক্রেতাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
এসি রুমে বসে থাকবেন না, দায়িত্ব পালন করুন বিএসটিআইকে হাইকোর্ট
পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক কিছু পায়নি বিএসটিআই
রাস্তায় দুধ ঢেলে খামারিদের প্রতিবাদ