‘কারও ঘর পুড়ছে দেখে আলু পোড়া খাওয়ার চিন্তা আমার নেই’
৮ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৪
ঢাকা: কারও ঘর পুড়ছে দেখে, আমি আলু পোড়া দিয়ে খাব ওই চিন্তা কিন্তু আমার নাই সেটি একটু মাথায় রাখবেন। আমরা সবসময় চিন্তু করি আমাদের আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর সাংবাদিকদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দশ বছরে কোথায় ছিলেন? দেশকে কোথায় নিয়ে আসছি। সেটি একবার চিন্তা করে দেখেন, একবার ভাবেন। কখনও কেউ চিন্তা করতে পেরেছেন বাংলাদেশ এত উন্নত হবে বা এতদূর যাবে? কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশের এই উন্নয়ন করতে পেরেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কিন্তু খুব পরিষ্কার। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সরকারের আসার পর থেকে সেটি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মেনে চলছি। আমাদের সঙ্গে সকলের ভালো বন্ধুত্ব। এখন কার সঙ্গে কার কী যুদ্ধ, কার সঙ্গে কি মনোমালিন্য, কার কী ঠোকাঠুকি ওটা তো দেখার দায়িত্ব আমার না। আমার দেখার দায়িত্ব যে, আমার দেশের উন্নয়নে কে আমাকে সহযোগিতা করছে, কে অবদান রাখছে বা কার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।’
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার এত বড় একটা ঝামেলা আমাদের কাঁধে পাঠাল। আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাইনি বরং আলোচনা চালিয়ে গেছি। এখন আলোচনা চালাচ্ছি বা কথা বলছি। কাজেই কাজ করার ধরনটা একটু আলাদা। আমরা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই চলতে চাই। কারণ আমেরিকার সঙ্গে চীনের একসময় বড় বন্ধু ছিল আমেরিকা আর চীন। এখন আবার আমেরিকা চীনের সঙ্গে হলো বাণিজ্যযুদ্ধ। আমাদের চেষ্টা থাকবে, কে কি করল সেটা দেখা না। কতটুকু আমরা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারি, আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আর সেই সুযোগটা আমরা কোথা থেকে কোথা থেকে পাব। আমরা সেইটাই বিবেচ্য বিষয়। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করি। এখন কারও ঘর পুড়ছে দেখে, আমি আলু পোড়া দিয়ে খাব ওই চিন্তা কিন্তু আমার নাই। সেটা একটু মাথায় রাখবেন। অন্যের ঘরে আগুন লাগল দেখে, আমি ওখানে আলু পোড়া দেব তা কিন্তু দেব না।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার নিজের দেশের নীতি-নির্ধারণে চলব দাবি করে বৈদেশিক ঋণের ফাঁদ নিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা কিন্তু যথেষ্ট সতর্ক। আর আমাদের কিন্তু বৈদেশিক ঋণের বোঝাটা খুব বেশি না। আমাদের জিডিপির মাত্র ১৪ ভাগ হলো আমাদের ঋণ। আমাদের ঋণ আমরা সময়মত পরিশোধ করে যাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কিন্তু এখানে আমরা ব্যর্থ হইনি। কাজেই আমরা যেটা নেই হিসাব করে নিই। আমাদের যে বাজেট এই বাজেট ৯৯ ভাগই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে করি। আমাদের যে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট, তার ৯০ ভাগই আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু কিন্তু আমরা আমাদের টাকায় করে যাচ্ছি। চীনের ঠিকাদার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি তৈরি করে দিচ্ছে। আমরা কিন্তু পেমেন্ট দিচ্ছি। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্প বিভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করছি। বিভিন্ন দেশ যেভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করছে সেটাও আমরা নিচ্ছি কিন্তু নেওয়ার সময় এই বিষয়টা আমরা সবসময় সতর্ক থাকি। আমরা কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক। ওই সতর্কাবস্থায় আমরা দেশকে কিন্তু এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯ কোটি টাকার বাজেট ও ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকায় উন্নয়ন বাজেটের দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনারা নিজেরা একবার চিন্তা করে দেখেন এবং আমাদের জিডিপি আজকে ৮ দশমিক ১ ভাগ। আমি তো ভাবছিলাম অন্তত সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই কথাটা আসবে, আজকে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি দেশ, যে তার জিডিপি ৮ দশমিক ১ভাগে উন্নীত করতে পেরেছে। কই আপনারা তো সেটা একবারও বললেন না। নিজের ভালোটা দেখতে পারেন না কেন? নিজের ভালটা একটু বলেন। মানুষও শুনুক।’
সম্প্রতি চীন সফরে বাংলাদেশের জিডিপি অর্জন নিয়ে চীন সরকারের প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারের ভূয়সী প্রশংসার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে গেলাম, সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বলল। প্রাইম মিনিস্টারও শুনে খুবই খুশি এবং বাহবা দিয়েছেন। আর আমাদের দেশে কিছু লোক আছে। তাদের তো কোনোকিছুই ভালো লাগে না। তারা ভালো না লাগার ব্যারামে ভুগছে। ওদের কি আছে ভীত আমি জানি না। তাদের কোনোটাই ভালো লাগে না, এই একটা শ্রেণি আমাদের।’
সবসময় আমরা চিন্তু করি যে, আমাদের আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। কারও মুখাপেক্ষী না দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তো বলেই গেছেন, যে দেশের মাটিতে একটা বীজ ফেললে গাছ হয়, গাছ হলে ফল হয় সে দেশের মানুষ কেন না খেয়ে থাকবে, সে দেশের মানুষ কেন পরমুখাপেক্ষী হবে? আর মাটি আর মানুষ থাকলে এই দেশকে গড়ে তুলতে পারব, তিনিই বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দশ বছরে কোথায় ছিলেন, দেশকে কোথায় নিয়ে আসছি, সেটা একবার চিন্তা করে দেখেন, একবার ভাবেন। কখনও কেউ চিন্তা করতে পেরেছেন বাংলাদেশ এত উন্নত হবে বা এতদূর যাবে। কিন্তু আমরা করতে পেরেছি। কেন পেরেছি। কারণ এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন করেছে। আর এটা মনে রাখবেন, সেই দেশই উন্নতি করতে পারে, যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে, যারা কষ্ট স্বীকার করে, তারাই যখন ক্ষমতায় থাকে শুধু তখনই সেই দেশের উন্নতি হয়। উড়ে এসে জুড়ে বসলে তারা করে না। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়। এটা হলো বাস্তবতা।’
সারাবাংলা/এনআর/একে
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেবে চীন
‘রোহিঙ্গারা ফিরে না গেলে স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’
‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে’
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীনের সমর্থন চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী
চীন সফরে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা সই
চীন সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শুরু
আন্দোলন করছে করুক, আন্দোলন ভালো জিনিস: প্রধানমন্ত্রী
আমাদের ছেলেদের কেউ খারাপ বলতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী