সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে আম্পান, মোংলা ও পায়রায় মহাবিপদ সংকেত
২০ মে ২০২০ ০৮:৫৩
ঢাকা: বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এটি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার বেগের শক্তিশালী আঘাতে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
আবহাওয়া অধিদফতরের সকাল ছয়টার সর্বশেষ বুলেটিনে দেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত মানে- ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রমকালে বন্দর ঝড়ের তীব্রতার কবলে পড়তে পারে। বন্দরের উপর দিয়ে বা পাশ দিয়েই ঝড় উপকূল অতিক্রম করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আরও দেখুন: আম্পান: লাইভ আপডেট
তার আগেই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে ঢাকা ও কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দিনের শেষ ভাগে বৃষ্টির বেগ বেড়ে গিয়ে ভারী বর্ষণ হবে। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ যা ধারণা করা যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের হাতিয়া প্রথম লক্ষ্য বস্তু হতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূল এবং পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে আম্পান।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথে রয়েছে দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপ। সেইসঙ্গে সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: দূরত্ব কমছে আম্পানের, দিকও বদলাচ্ছে?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রাসমুদ্র বন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি আবহাওয়া সার্ভিস মার্স লিমিটেড সকাল ৬টার আপডেট জানিয়ে বলে, সন্ধ্যার দিকে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়। এর প্রভাবে বিরতি দিয়ে দিয়ে প্রবল ঝোড়ো বাতাসের সাথে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রঝড় হতে পারে; যা সম্ভবত ২০ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত চলতে পারে।
আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানান, প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে প্রবেশের পর উপকূলবর্তী এলাকায় ঘণ্টায় ১৬৫ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে। আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ৫ থেকে ১০ ফুটেরও বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এসব অঞ্চল মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ১৪০ থেকে ১৬০ মিটার বেগে ঝোড়ো বাতাসসহ অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা নৌযানগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবার ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য ৩১শ মেট্রিক টন চাল, ৫০ লাখ নগদ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৩১ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ২৮ লাখ টাকা এবং ৪২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী গভীর সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় তিন স্তরের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে। সেই সঙ্গে নৌবাহিনীর ২৫টি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩১৩টি স্পিডবোট, ১৫টি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, ২৩৯ আউট বোর্ড মোটর, চারটি জাপানিজ উদ্ধার বোর্ড, ছয়টি ফাইবার গ্লাস বোর্ড, ১১৫টি শার্ক বোর্ড এবং দুইটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ভেহিক্যাল প্রস্তুত রয়েছে। আর্মি এভিয়েশন উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ এর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।