ঢাকা: বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের যাঁতাকল থেকে বহু ত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার। প্রতিহিংসা, হীনমন্যতা ও পরস্পরের প্রতি কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি আবারও ফ্যাসিবাদী কাঠামো ফিরিয়ে আনতে পারে।
তাই জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মামলাবাণিজ্যসহ সব ধরনের সহিংস মনোভাব পরিহার করে যৌক্তিক রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে বিএনপি, জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিবির সভাপতি বলেন, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে যারা ‘লকডাউন’ নামের কর্মসূচি দিয়েছে, আমরা তাদের স্পষ্টভাবে জানাতে চাই— নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান নেই। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টের যেকোনো প্রচেষ্টা ছাত্রসমাজ ও জনগণ প্রতিহত করবে। ইসলামী ছাত্র শিবির জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যেকোনো নৈরাজ্যের জবাব দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে অনেক গণমাধ্যম নিরপেক্ষতা হারিয়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল— সব গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু গণমাধ্যম এখনও নিরপেক্ষতার মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে জুলাই-পরবর্তী সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের কর্তাব্যক্তিরা টেলিভিশন ও মিডিয়া হাউজ দখল করে নিজেদের মনমতো সংবাদ প্রকাশ করছে। ব্যত্যয় ঘটলে সাংবাদিক ছাঁটাইও হচ্ছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দুজন সাংবাদিককে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এটি ফ্যাসিবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আমরা গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করি—অন্যথায় দেশের গণতন্ত্র আবারও হুমকির মুখে পড়বে।
শিবির সভাপতি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দেড় বছর পার হয়েছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলেও তা অত্যন্ত ধীরগতির। এর সুযোগে কিছু ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতাদের ছাড়াতে মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে জামিন করানো হচ্ছে—যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গতকাল (১১ নভেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সব মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন—যা হতাশাজনক ও জুলাই শহিদদের রক্তের প্রতি অবমাননা।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল (১৩ নভেম্বর) শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা হবে। এর আগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত দুই দিনে প্রায় ১৫টি বাসে আগুন দিয়েছে তারা। ময়মনসিংহে এক বাসচালক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী। আমরা অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।