ঢাকা: জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব সাবেক এমপি আহসান হাবিব লিংকন তার ফেসবুক পেজে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিবসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে-
যে কথা হয়নি বলা, সে কথা কি কম প্রিয় ছিল? তুমি শুনিতে চাহো নি প্রিয়।
আপনায় ফিরে আপনার স্বর
স্বরের গভীরে বেঁধেছে এ ঘর, স্বপনে বাধনও দিয়া।
তিনি লিখেছেন, স্বপ্ন ছিল আমার সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম দিয়ে, সারাজীবনের অর্জিত সুনাম সুখ্যাতি দিয়ে, নিজের অর্জিত মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বাকি জীবটুকু শহিদ জিয়া এবং দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা এবং দেশপরিচালনায় অবদান রাখবো। কিন্তু হায় !! আমাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেননি। ২০১৮ সালের মহা দুর্দিনে প্রার্থী হয়ে জীবন বিপন্ন হতে গিয়েও কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যায়। আমার বাড়ী ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করা হয়। জোট এবং যুগপৎ আন্দোলনের একমাত্র নেতা, যাকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত। বিএনপির দালালি করার অপরাধে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের গুণ্ডাবাহিনীর আক্রমণ করে শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে লোহার রড ও গজারী কাঠের লাঠি পেটা করে। আল রাজী হাসপাতালে আমার মাথায় ১৪ টি সেলাই দেওয়া হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসি।
তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ২০১৫ সালে দেশ মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে পার্টি অফিসে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ করতে যেয়ে গ্রেফতার বরণ করি। ৬ টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে নির্যাতিত হই। ২০২৩ সালে সেই মিথ্যে মামলায় ১টি তে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
তিনি দু:খভরা মন নিয়ে লিখেছেন, আমার মা জেলে ছিলেন না। জেলে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মা। দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া। দেশমাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনে আমি যেন কারো কাছে হাত না পাতি সেই লক্ষ্যে আমার মা ১৯ বিঘা জমি বিক্রি করে সমুদয় টাকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। যে বিএনপির জন্য রক্ত দিলাম, বারবার কারাবরণ করলাম, হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলাম, সুদিনের আভাস পেয়ে আমাকে রিক্ত নিজ:স্ব করে শূন্য হাতে অপমানজনকভাবে বিএনপি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।
তিনি আরও লিখেছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমার দল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। তাই বিশ্বাসঘাতকদের পরিত্যাগ করে আমার এলাকার জনগণের আদালতে বিচার দেওয়ার লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয় পার্টির ( কাজী জাফর) মহাসচিবসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রসুলুল্লাহ (দল : ) এর ন্যায়পরয়নতার কথা বলেছেন। কিন্তু আমার প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে তার ন্যায় বিচার চাই।
আমার দুর্ভাগ্য পৃথিবীর বিরল ব্যক্তিত্ব, যার পিতা এদের সবচেয়ে জনপ্রিয় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং যার মা বিরল জনপ্রিয়তায় বারবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। সুযোগ্য সন্তান, যাঁকে নিয়ে দেশবাসী আশায় বুক বেঁধে আছে যে, তারেক রহমানের হাত ধরে দেশে সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে, তাঁর সাথে থাকতে পারলাম না। এটা আমার দুর্ভাগ্য।
নিজের মূল্যায়ন হয়নি এমন অভিযোগ করে তিনি লিখেছেন, ১২ দলীয় জোটের সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সরষে দানার পরিমাণ অবদান থাকলে তিনি সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবেন বাস্তবে তিনি আমার মূল্যায়ন করেননি।
তিনি স্ট্যাটাসের শেষে লিখেছেন, ৫ই আগস্ট ২০২৪ এর পর জনাব তারেক রহমানের প্রতিটি ভাষণ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ওনার বক্তব্যের সাথে বাস্তবে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না, আমার মায়ের বয়স ৯৯ বছর। তাঁর চোখের পানি জনাব তারেক রহমানের চলার পথ যেন পিচ্ছিল না হয়ে মসৃণ হয় সেই দোয়া করছি। আমিন।