দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতার কারণ জানতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা
৫ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:০৭
ঢাকা: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা কেন নৌকার বিরোধিতা করেছে সে ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী দলীয় সংসদ সদস্য-মন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলটির।
তবে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে দুই একদিনের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে দলের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিরোধীতাকারী দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
স্বপনের প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে তাহলে তাদের জিজ্ঞাসা কর, কেন তারা বিরোধিতা করেছে? প্রধানমন্ত্রীর জবাবে পরিপ্রেক্ষিতে শোকজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দুই একদিনের মধ্যে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রিপোর্ট জমা দিলেও তাদেরকে আরও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেও দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের আগামী সম্মেলন যথাসময়ে যথাসময়ে হবে বলে জানিয়ে দেন। তাই আগামী সম্মেলন কেন্দ্র করে সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
তাই বৈঠকের শুরুতে দলের যুগ্ম সাধারণ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সারাদেশে কোন কোন উপজেলা বা পৌরসভার সম্মেলনে কবে নাগাদ হয়েছে বিভাগওয়ারী প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আগামী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক সফরসূচি চূড়ান্ত করবেন দলের নেতারা।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া কোনো কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। তবে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, দুই একদিনের মধ্যে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
সারাদেশে চার ধাপে ৪৪৫টি উপজেলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় অধিকাংশ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। কোথাও কোথাও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরোধিতার কারণে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করে। তৃণমূলের এ বিভক্তিতে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলেন। চার ধাপে ৪৬৫ উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হলেও ভোটগ্রহণ হয়েছে ৪৪৫টিতে। চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১১১ জন। নির্বাচিতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩১১ প্রার্থী নৌকা মার্কা নিয়ে এবং ১৩০ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে অন্য কোনো প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৪ প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসেবে জয় পেয়েছেন।
এ নির্বাচনে দেশের বেশ কিছু উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে সরাসরি মাঠে নেমে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কর্মকর্তা সভাপতিমণ্ডলির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারী মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের তালিকা তৈরি করছেন ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের ৮ সাংগঠনিক সম্পাদক।
বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাধারণত দুমাস পরপর সভা করি। কিন্তু আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে কারণে দেরি হয়ে গেছে। তারপরও এ সভাটা আজ আমরা করছি।
বৈঠকের এজেন্ডা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজ সাংগঠনিক বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। উপজেলা নির্বাচনে হয়ে গেল, সে বিষয়ে আমাদের বৈঠকে আলোচনা হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন তিনি। সভা পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। কার্যনির্বাহী সংসদের সভা পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদ, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বদর উদ্দীন আহমদ, এসএম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, মির্জা আজম, এবিএম রিয়াজুল কবীর কাওছার, পারভীন জামান কল্পনা, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, মারফা আক্তার পপিসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে