Sunday 08 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ৭৮ ফ্ল্যাট খালি, বছরে ক্ষতি ৮০ লাখ টাকা

আজাহারুল ইসলাম, ইবি
৮ জুন ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৮ জুন ২০২৫ ০৮:২৬

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ফাঁকা আবাসন কোয়ার্টার -ছবি: সারাবাংলা

ইবি: পুরনো জীর্ণ স্যাঁতসেঁতে ভবন, অতিরিক্ত ভাড়া, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) এর ডরমেটরিতে থাকা আবাসন কোয়ার্টার ছাড়ছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন এ ভবনগুলো ব্যবহার অযোগ্য হওয়ার পথে বলে জানিয়েছে এস্টেট ও প্রকৌশল দফতর। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কোটি টাকার ভবনগুলো। আর এ কারণে ইবি’র বছরে অন্তত ৮০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে সম্প্রতি এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানা যায়, ডরমেটরির ১০টি ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৯৯টি ফ্ল্যাট থাকলেও এর মধ্যে ৭৮টিই বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভবন পুরোটিই খালি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলত: অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বাসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অধিকাংশ পরিবার। আবাসন কোয়ার্টারের ভাড়ার চেয়ে অনেক কম খরচে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে বাসা পাওয়া যায়।

শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলছেন, বছর দুই আগেও সবগুলো বাসাতে শিক্ষক কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে থাকতেন। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ হিসেবে ভাড়া দিতে হয়। এতে একেকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার গড়ে ভাড়া দাঁড়ায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

এদিকে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহে এর চেয়ে কম ভাড়ায় ভালো মানের বাসা পাওয়া যায়। ফলে ওই সময় একযোগে অধিকাংশ শিক্ষক কর্মকর্তারা কোয়ার্টার ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নেন। তাছাড়া তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ক্যাম্পাসের চেয়ে শহরে ভালো পরিবেশ থাকায় তারা শহরেই থাকছেন অনেকেই।

পরিত্যক্ত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ভবন -ছবি : সারাবাংলা

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক ভবনগুলোর চারপাশে ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও ভবনের গায়ে শেওলা জমে গেছে। ভবনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা থাকার ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কক্ষের জানালা, দরজা, বাতি ও টয়লেট ফিটিংসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাতের আধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ভবনে বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, ভাড়া কমানো, ভবনগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিয়মিত সংস্কার এবং বাচ্চাদের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে আবাসিক এলাকা আবার আগের মতো উচ্ছ্বাসে ভরে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বদ্ধ থাকার ফলে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাহিদার আলোকে সংস্কার করে থাকি। বর্তমানে কোনো চাহিদা না থাকায় কোয়ার্টারগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। ভবনগুলো এখনি সংস্কার না করা হলে আর কিছুদিন পরে সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।’

জানা যায়, আবাসিক ভাড়া পুনরায় নির্ধারণের জন্য গত বছর ২৮ অক্টোবর ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দুই মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ৬টা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যদি এটা কার্যকর হয় তাহলে এই ভবনগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে ৮০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই সাথে কোটি টাকার ভবনগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।’

-ছবি: সারাবাংলা

বাসা বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, ‘গত সরকারের সময়ে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কাটার সিদ্ধান্ত হয়। কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে এই বাসায় থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশোধিত কমিটিকে জানিয়েছি তারা যেন এই পুরাতন বাসাগুলোকে সাবস্টেন্টেড ঘোষণা করে একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। তাহলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা থাকতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে এরকম কোন উদ্যোগ না নেওয়ার ফলে বাসাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বাসাগুলো ফাঁকা থাকার কারণ জানতে চেয়ে ইউজিসি একটা প্রস্তাবনা চেয়েছিল। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাইনি।’

এদিকে পুরাতন আবাসিক ভবনগুলো স্বত্বেও সেগুলো সংস্কার না করে নতুন করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০০০ বর্গফুট বিশিষ্ট ৩৬টি এবং কর্মচারীদের জন্য ৬০০ বর্গফুটের ৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। ভাড়া নাগালের মধ্যে না এলে এগুলোও ফাঁকা থাকার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএস

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন কোয়ার্টার