শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে ‘কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড’ বাঁধ নদীতে ধসে গেছে। শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার দিন থেকে ভাঙন শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এমন ভাঙন পরিস্থিতিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১০-২০১১ সালে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড’ বাঁধটি নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। বাঁধটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবা এলাকায় ১০০ মিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড’ বাঁধ ধসে যায়, যার পুনর্নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যয় করে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেই সংস্কার করা এলাকার কিছু অংশসহ দুটি স্থানে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার পদ্মা নদীতে ধসে পরেছে।
এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে পরেছে শরীয়তপুরের জজিরার নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মহর আলী মাদবরকান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি এবং কালাই মোড়লকান্দি গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি। তাই অনেকেই বাঁধের কাছ থেকে বাড়িঘর ও গাছপালা সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের দুই শতাধিক দোকানপাট। তাই আতঙ্কে রয়েছে ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছেন, ভাঙনরোধে সোমবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আর স্থায়ী প্রকল্পও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে ওই অঞ্চলের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে হঠাৎ বিকট শব্দ। দৌড়ে নদীর পাড় গিয়ে দেখি ঘরের সামনের বাঁধটি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। তাই ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছি। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না। আমরা এখানে স্থায়ী বাঁধ চাই।’
আরও কয়েকজন বলেন, কয়েকদফা ভাঙনে আমরা এখন নিঃস্ব। এখন যাদের যা আছে, তা রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ করা অতিজরুরি। পদ্মা সেতুর পশ্চিম পাশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ব পাশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হয়নি, তাই ভাঙছে।’
পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন খান বলেন, সরকার স্থায়ী বাঁধ না দিলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ৭০ ভাগ নদীগর্ভে চলে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও দোকান-ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের ঘর উত্তোলনের জন্য টিন ও আর্থিকভাবে সহযোগিতাসহ সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতের কারণেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জরুরি আপদকালীন কাজ শুরু হয়েছে। যাতে করে এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও দোকানপাট রক্ষা পায়। ভাঙন কবলিত এলাকায় একটি স্থায়ী প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। স্থায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এলাকার মানুষ ভাঙনর হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবেন।’