ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে নতুন করে বেশ কিছু প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, জব্দকৃত তহবিল মুক্ত করা এবং একটি বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচিতে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান। সিএনএন-এর চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) ভারতীয় গণমাধ্যম এনটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো গেছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক হামলা সত্ত্বেও এই আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতাকারীরা পর্দার আড়ালে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এ সপ্তাহে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর আলোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তার সবকটি একটি অ-আলোচনাযোগ্য শর্তের ওপর নির্ভরশীল- ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যতে নামিয়ে আনা। তবে তেহরান ধারাবাহিকভাবে এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কিছু প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- বেসামরিক জ্বালানির জন্য অ-সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক অবকাঠামোতে ২০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব। ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে জব্দকৃত ৬ বিলিয়ন ডলারের ইরানি সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ।
এ ছাড়াও, একটি প্রস্তাব অনুযায়ী, সম্প্রতি মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা দ্বারা আক্রান্ত ফোরডো পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে একটি অ-সমৃদ্ধকরণ বেসামরিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এটি সম্ভবত মার্কিন-মিত্র উপসাগরীয় দেশগুলো দ্বারা অর্থায়ন করা হতে পারে। তবে এই নতুন প্রস্তাবের অধীনে ইরান এই স্থানটি পরিচালনা করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনার নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। পারমাণবিক কর্মসূচি তৈরি করার জন্য কাউকে অর্থ দিতে হবে, তবে আমরা সেই প্রতিশ্রুতি দেব না ‘
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বুধবার সিএনবিসিকে বলেছেন, ‘প্রশাসন একটি ‘ব্যাপক শান্তি চুক্তি’ চাইছে এবং ইরানের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক শর্তাবলী উপস্থাপনের সুযোগ দেখছে। তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো নতুন কর্মসূচি অবশ্যই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্পের মডেল অনুসরণ করবে, যা সমৃদ্ধকরণ নিষিদ্ধ করে।’
উইটকফ বলেছেন, ‘এখন ইরান নিয়ে প্রশ্ন ও আলোচনা হচ্ছে, কীভাবে আমরা আপনার জন্য একটি উন্নত বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠন করব যা অ-সমৃদ্ধকরণযোগ্য হবে?’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে আলোচনার সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি একটি চুক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছুটা অনিশ্চিত বলে মনে হয়েছে। বুধবার তিনি বলেন, ‘আমার চুক্তি হোক বা না হোক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’ যদিও তার কিছু সহযোগী বর্তমান যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে একটি দীর্ঘমেয়াদী পারমাণবিক চুক্তিকে অপরিহার্য বলে মনে করছেন।
সিএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কাতার মার্কিন-ইরান আলোচনার মধ্যস্থতা চালিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের হামলার আগে মার্কিন-ইরান পাঁচটি বৈঠক হয়েছিল, যা ওমানে নির্ধারিত ষষ্ঠ দফা আলোচনাকে থামিয়ে দেয়। মার্কিন হামলার আগে মধ্যস্থতাকারীরা ইরানকে জানিয়েছিলেন যে এই পদক্ষেপ সীমিত হবে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়ে মার্কিন দাবি অটল থাকবে।
বুধবার (২৫ জুন) ন্যাটো সম্মেলন থেকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি চুক্তিতে সই করতে পারি, আমি জানি না। আমি হয়তো একটি বিবৃতি পেতে পারি যে তারা পারমাণবিক শক্তি অর্জন করবে না, সম্ভবত আমরা সেটাই চাইব।’