যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে দেশটির জান্তা সরকার। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা চলছে।
সমালোচকরা এই নির্বাচনকে ধোঁকাবাজি বলে অভিহিত করেছেন, কারণ জান্তা-বিরোধী দলগুলোকে হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে অথবা তারা নিজেরাই অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এতে সামরিক বাহিনীর অনুগত দলগুলোর আধিপত্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা চলছে। সেনাপ্রধান মিন আউং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন শাসক সেনারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য মোট ৫৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি দল সর্বত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছে।
গত মাসে দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার নামের এক সংবাদপত্র জানিয়েছে, ছয়টি দল অনুমোদন ও নিবন্ধনের জন্য যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
কিন্তু জান্তা-বিরোধী দলগুলোকে হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে অথবা অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে, তাই পশ্চিমা সরকার জেনারেলদের ক্ষমতা জোরদার করার পদক্ষেপ হিসেবে এই নির্বাচনকে বাতিল করে দিয়েছে এবং এতে সামরিক বাহিনীর প্রতিরূপ দলের আধিপত্য থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্রের মতে, নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন দেশব্যাপী ৩০০ টিরও বেশি নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে বর্তমানে সামরিক বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দখলে থাকা এলাকাগুলোও রয়েছে।
গত বছর, সেনা-সমর্থিত কর্তৃপক্ষ ভোটার তালিকা তৈরি করার জন্য দেশব্যাপী আদমশুমারি পরিচালনা করেছিল। তবে মিয়ানমারের ৩৩০টি শহরের মধ্যে মাত্র ১৪৫ টিতেই স্থল জরিপ পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিল তারা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানকে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ হিসেবে ন্যায্যতা দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর তিন মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সু চির বর্তমানে বিলুপ্ত ক্ষমতাসীন দল ব্যাপকভাবে জয়লাভ করার পর তাতে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সামরিক বাহিনী।
অবশ্য নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা অভিযোগ করা জালিয়াতির কোনও প্রমাণ খুঁজে পাননি, যা ফলাফল পরিবর্তন করতে পারত।