ঢাকা: তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী করনীতি প্রণয়ন ও এর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিতে জাতীয় তামাক কর সেল গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তামাক কর বিষয়ে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনলাইন সভায় তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এ কথা বলেন।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্যর সঞ্চালনায় ওই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাবির বিইআর এর গবেষণা সহকারী ইশরাত জাহান ঐশি, বিএমএসএস’র সভাপতি ডা. ইফতেখার আহমেদ সাকিব, আহ্ছানিয়া মিশন ইউথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিইং এর সমন্বয়কারী মারজানা মুনতাহা ও ডিআইইউ এর টিসিআরসি ইয়ুথ ভলান্টিয়ার রাহাত রহমান। সভাটি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ফেসবুক পেইজ থেকেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ইসরাত জাহান ঐশী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধি করলেও দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকায় কর বৃদ্ধির হার যেমন আশানুরূপ নয় ঠিক তেমনি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছে না। এ কারণে তরুণ প্রজন্মকে সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর নিয়মিত উল্লেখযোগ্য হারে কর বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ অপরিহার্য।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান তামাক কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল ও বহুস্তরবিশিষ্ট। পাশাপাশি কর আদায় ব্যবস্থা আধুনিক না হওয়ায় কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এ ছাড়া মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূলের সঙ্গে তদূর্ধ্ব শব্দটি যুক্ত থাকার সুযোগে কোম্পানিগুলো প্রচলিত ৪টি মূল্যস্তরের মধ্যবর্তী দামে একাধিক ব্র্যান্ড বাজারে আনছে। যা তরুণদেরকে প্রয়োজনে সুবিধাজনক মূল্যস্তরবিশিষ্ট ব্র্যান্ডের তামাকাজাত দ্রব্য গ্রহণের অবাধ সুযোগ করে দেয়।’
ডা. ইফতেখার আহমেদ সাকিব বলেন, ‘তামাকের ব্যবহার তরুণদের মধ্যে নিকোটিন আসক্তি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও মানসিক সমস্যার প্রবণতা বাড়ছে এবং তামাকের ব্যবহার সকল রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ তরুণই কৌতুহল থেকেই ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হচ্ছে যার মূল কারণই সহজলভ্যতা ও নিম্নমূল্য।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধের বিধান বিদ্যমান আইনে যুক্ত করার পাশাপাশি এটির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
রাহাত রহমান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো তরুণদেরকে তামাকের প্রতি আকৃষ্ট করতে কম দামে নিত্যনতুন ব্র্যান্ড লন্সিং, রঙবেরংয়ের প্যাকেজিং ও বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আড়ালে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এমনকি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধের বিষয়টি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে কোম্পানিগুলো।’
মারজানা মুনতাহা বলেন, ‘কর না বাড়ানোর কারণে তরুণদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য সহজলভ্যই থেকে যাচ্ছে এবং কৌতুহলবশত তামাক গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা তাদেরকে অন্য নেশাদ্রব্যের দিকে ধাবিত করার পাশাপাশি পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে এবং মানসিক চাপ ও সহিংসতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকে অধুনিকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কোম্পানিগুলো নানান অপপ্রচার চালায়।’