Monday 01 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ রাজবাড়ী জেলা স্টেডিয়াম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ আগস্ট ২০২৫ ০৮:১৪ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫ ১০:৪১

রাজবাড়ী: রাজবাড়ী জেলা স্টেডিয়াম তার পুরোনো গৌরব হারিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে মাঠ ও গ্যালারি এখন জরাজীর্ণ। স্টেডিয়ামের এই বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা স্টেডিয়ামের এই অবস্থার জন্য অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করেছে। তবে তারা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা প্রশাসক স্টেডিয়ামের দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।

১৯৬৪ সালে রাজবাড়ী জেলার প্রাণকেন্দ্রে প্রায় ১৩ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছিল রাজবাড়ী জেলা স্টেডিয়াম। একসময় এটি জেলার ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে স্টেডিয়ামটি এখন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্টেডিয়ামের এমন বেহাল দশা দেখে ক্ষুব্ধ খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকেরা। তারা অবিলম্বে স্টেডিয়ামটি সংস্কার করে সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য জেলার ক্রীড়াপ্রেমীদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা স্টেডিয়ামের অবস্থা খুবই নাজুক। তিনটি গ্যালারির মধ্যে একটি ভাঙাচোরা ও ফাটল ধরা অবস্থায় রয়েছে। বাকি দুটি শ্যাওলা পড়ে নোংরা হয়ে আছে। স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই অকেজো, ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠ জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিংরুম, স্যানিটেশন অবস্থা খুবই খারাপ। যে কারণে স্থানীয় খেলোয়াড়রা ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারছেন না। এছাড়াও, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

ক্রিকেটার তাফসিন, আরাফ ও হিমেলের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় স্টেডিয়ামের মাঠ বড় বড় ঘাসে ভরে গেছে। এতে খেলাধুলা করতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া, খেলোয়াড়দের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা শুভসহ আরও কয়েকজন বলেন, রাজবাড়ীতে এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম, কিন্তু এর বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। খেলাধুলার কোনো পরিবেশ এখানে নেই। মাঠ কাদা ও গর্তে ভরা।

তারা মনে করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই স্টেডিয়ামটির এমন দশা। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি থাকলে স্টেডিয়ামটি আবার তার পুরোনো প্রাণ ফিরে পাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য মিরাজুল মাজিদ তূর্য জানান, স্টেডিয়ামটি অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল। ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ প্রায় ৮ লাখ টাকা, পৌর উন্নয়ন কর বাবদ প্রায় ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান আয় দিয়ে এই দেনা শোধ করা সম্ভব নয়।

তবে তিনি জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা দোকানের ভাড়া আদায় করা হয়েছে এবং নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে সংস্থার আয় বাড়ে। তিনি আরও বলেন, তারা ইতিমধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে প্রতি বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার জন্য প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ আসে। এই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল, সংস্কার, স্টাফদের বেতন এবং খেলাধুলার অন্যান্য খরচ মেটানো হতো।

এত টাকা বরাদ্দ আসার পরও কেন স্টেডিয়ামের উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি, কোথায় কিভাবে খরচ হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সেই নথিপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করছি।

জেলা ক্রীড়া অফিসার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আহমেদ জানান, জেলা স্টেডিয়ামের কিছু সমস্যা আছে, আর সেগুলো সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, স্টেডিয়ামের পুরোনো ভবনের পাশে যে টয়লেটটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো ছিল, সেটি ঠিক করা হয়েছে।

এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে মাঠে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। ঘাস কাটার মেশিন মেরামত করা হয়েছে। দ্রুতই মাঠ পরিষ্কার করা হবে। তিনি আরও জানান, নতুন একটি মেশিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে বিসিবির কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্টেডিয়ামের সব সমস্যা সমাধানে ও খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সভাপতি সুলতানা আক্তার স্টেডিয়ামের সব সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।

সারাবাংলা/এসআর

ক্রীড়া খেলোয়াড় জরাজীর্ণ জেলা স্টেডিয়াম নাজুক রাজবাড়ী সংস্কারের অভাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর