কুড়িগ্রাম: শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমুহূর্তে চারপাশে এখন পুজোর রঙ–গন্ধ। মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জা, কুমোরপাড়ায় ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পীরা। তবে এবারের দৃশ্য অন্যরকম—পুরুষদের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো নারীরাও প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত হয়েছেন। সংসারের দায়িত্ব সামলে কুড়িগ্রামের নারীরা প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন
দেবীর আগমনকে ঘিরে মণ্ডপ ও মন্দিরগুলোতে যেমন শুরু হয়েছে কর্মব্যস্ততা। তেমনি কুমোরতলীর পাল পাড়ায় মালাকরদের মধ্যেও দেখা গেছে কর্মব্যস্ততা। তবে এবারের কর্মব্যস্ততায় প্রথমবারের মতো নজর কেড়েছে নারী প্রতিমা শিল্পীদের অংশগ্রহণ।

নিজ হাতে প্রতিমা গড়ছে শিশু শিল্পীরা
পারিবারিক পেশা আর সহজাত নেশার প্রতি আগ্রহ থেকেই কুড়িগ্রামে এবার প্রথমবারের মতো স্বামী ও সন্তানদের পাশাপাশি প্রতিমা গড়ছেন নারী শিল্পীরা।
প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসবকে ঘিরে প্রতিমা কারিগরদের ব্যস্ততা চোখে পড়লেও এ বছর ভিন্ন আঙ্গিকের চিত্র দেখা মিলল কুড়িগ্রামের পাল পাড়া আর কুমার পাড়ার প্রতিটি প্রতিমা কারখানায়। এ বছর কুড়িগ্রামে অধিক সংখ্যক পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বাড়ায় এবং শেষ মুহূর্তে প্রতিমার অর্ডার আসায় প্রথম বারের মতো সংসার সামলিয়ে এবার পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে নিজ হাতে প্রতিমা গড়ছেন মালাকরদের স্ত্রী, মা ও পূত্রবধুরা।
সরেজমিন কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ির দেবালয়,রাজারহাটের বৈদ্যের বাজার,সদরের ঘোগাদহ ও দাশেরহাটসহ প্রতিটি প্রতিমা কারখানায় গিয়ে দেখা যায় নারী শিল্পীরা প্রতিমা গড়ছেন।
সকালে উঠে সংসারের কাজ সামলিয়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিমার সাজ, অলংকার, পলিশ, মুকুট, শাড়ির ডিজাইনসহ প্রতিমার অঙ্গসজ্জা থেকে শুরু করে কাঠামো নির্মাণ সবই করছে নারী প্রতিমা শিল্পীরা। ছোট বেলা থেকে পারিবারিক পেশা হলেও কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক পেশাগতভাবে প্রতিমা তৈরির কাজ করেননি এসব নারী শিল্পীরা । এবছর বাড়তি চাপ সামলাতে পুরুষদের সহযোগী হয়েছেন তারা।

নিজ হাতে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি পূজার সরঞ্জাম তৈরি করছেন নারী শিল্পী
রাজারহাটের বৈদ্যেরবাজার গ্রামের নারী শিল্পী বেবী মালাকার জানালেন, ‘আগে সংসারের কাজের পর প্রতিমার কাজে খুব একটা সময় দিতাম না। কিন্তু এবার মণ্ডপের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় স্বামীকে সাহায্য করতে হচ্ছে। চাপ অনেক, তাই ঘরের কাজ ফেলে প্রতিমার কাজে বসতে হচ্ছে।’
স্কুলছাত্রী সপ্তমী মালাকারও প্রতিমাশিল্পে যুক্ত হয়েছেন বাবাকে সহায়তা করতে। তার ভাষায়, ‘বাবা একা সব সামলাতে পারছে না। গতবার যেখানে ৭টি প্রতিমা বানিয়েছিল, এবার ১৫টি। তাই স্কুলে না গিয়ে কাজ শিখছি।’
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি বাজারের আরেক প্রতিমাশিল্পী পূজা রানী বলেন, ‘প্রথমবারের মকো মায়ের প্রতিমা তৈরি করতে ভালোই লাগছে। আগে পুজোর সরঞ্জাম, প্রদীপ, ধুপোতি,কলস এসব তৈরি করতাম। এ বছর এতো বেশি চাপ যে এখন এসবের পাশাপাশি প্রতিমার অলংকার,মুকুট ,গায়ের পলিশ এসব কাজ করতে হচ্ছে।’
বংশ পরম্পরায় কাজ করা আরেক প্রতিমা শিল্পী শ্রী কালিকান্ত পাল বলেন, ‘সারা বছর মাটির জিনিস তৈরি করে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়। বছরের এই কয়েকদিন মা দুর্গার আর্শীবাদে প্রতিমা অর্ডার আসে। গতবার ৮টা তৈরি করছি,এবার ১৪টা প্রতিমার অর্ডার নিছি। সময়ও নেই তাই বাড়ির মেয়ে -বউরা আমাকে সাহায্য করছে কাজে,খুব উপকার হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার জেলার ৯ উপজেলায় মোট ৫১৭টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের চেয়ে ৩২টি বেশি। এর মধ্যে রাজারহাটেই হচ্ছে ১৩১টি পূজা, সদর উপজেলায় ৫৫টি, উলিপুরে ১২৫টি, ফুলবাড়ীতে ৬৫টি এবং অন্যান্য উপজেলাতেও বাড়তি আয়োজন হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পর্যন্ত চলবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব।