ঢাকা: দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গার বিদায়ের মুহূর্তে পূজামণ্ডপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত মিশ্র আবহ—আনন্দ ও অশ্রুর মিশেল। পূজা শেষে নারীরা একে অপরের কপাল ও গালে সিঁদুর মেখে নেন, যা পরিচিত সিঁদুর খেলা নামে। এই লাল রঙ শুধু উৎসবের প্রতীক নয়, বরং সম্পর্কের বন্ধন, শুভকামনা আর আগামী বছরের প্রত্যাশাও বটে।
সকালে ঢাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভিড় জমতে শুরু করে। প্রতিমার সামনে ভক্তিমুখর প্রার্থনার পরই শুরু হয় সিঁদুরের উচ্ছ্বাস। কারো শাড়ির আঁচল, কারো চুলের গোছা, আবার কারো মুখমণ্ডল ভরে ওঠে লাল রঙে। একে অপরকে আলিঙ্গন করে নারীরা বলেন ‘শুভ বিজয়া’, আর সিঁদুরের রঙে মিলেমিশে যায় হাসি-কান্না।
বিবাহিত নারীদের কাছে সিঁদুর খেলার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তারা বিশ্বাস করেন, স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় দেবীর কাছে এই রঙিন উৎসর্গ অর্পণ করা হয়। তবে এখন এটি কেবল ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ নয়, হয়ে উঠেছে সামাজিক উৎসবও।
পূজামণ্ডপে উপস্থিত এক তরুণী শুভ্রা দত্ত বললেন, ‘সিঁদুর খেলার সময় মনে হয় আমরা সবাই একই পরিবারের অংশ। বিদায়ের কষ্ট থাকলেও এই রঙ আমাদের এক করে দেয়।’
অপর এক গৃহবধূ মেঘলা সাহা জানালেন, ‘দেবীর বিদায় মানে খালি হয়ে যাওয়া। কিন্তু সিঁদুর মাখানোর মধ্যে আমরা আশীর্বাদ ভাগাভাগি করি, যেন আগামী বছর আবার নতুন করে আনন্দে ভরে উঠতে পারি ‘
আরেকজন প্রবীণ ভক্ত বললেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই দেখছি মায়েরা কপালে সিঁদুর মেখে দিচ্ছেন। এটা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির গভীর আবেগ।’
সিঁদুর খেলা শেষে ঢাকঢোল বাজিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে বিদায়ের প্রস্তুতি চলছে। তবে বুক ভরে ওঠে আগামী বছরের প্রত্যাশায়—‘আসছে বছর আবার হবে।’