Thursday 16 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু-জাকসুর পর চাকসুতেও ছাত্রশিবিরের বিশাল জয়, ভরাডুবি ছাত্রদলের

চবি করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:১৮ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৫৯

চাকসুতে বিজয়ী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদে ইব্রাহিম হোসেন রনি। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ডাকসু-জাকসুর পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনেও বড় ধরনের জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এর মধ্য দিয়ে সাড়ে চার দশক পর চাকসুতে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে শিবিরের। অন্যদিকে ফলাফল ঘোষণার শুরুতে আশা জাগালেও শেষপর্যন্ত বিশাল ব্যবধানে ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) শেষরাতে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, চাকসুতে মোট ২৬ পদের মধ্যে এজিএস ও সহ-খেলাধুলা সম্পাদক বাদে ২৪ পদে শিবির জয়ী হয়েছে। চাকসুর মোট ২১টি সম্পাদকীয় পদের ১৯টিতেই জিতেছে শিবির। পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদের সবগুলোতে তারা জয় পেয়েছে।

শুধুমাত্র এজিএস পদটিই দখল করতে পেরেছে ছাত্রদল। আর সহ-খেলাধূলা সম্পাদক পদটি পেয়েছে বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য নামে একটি প্যানেলের প্রার্থী।

বিজ্ঞাপন

চাকসুর ভিপি রনি-জিএস হাবীব-এজিএস আইয়ুবুর রহমান।

প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে ইব্রাহীম রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়েছেন। ছাত্রদল থেকে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন চার হাজার ৩৭৩ ভোট।

জিএস পদে শিবিরের সাঈদ বিন হাবিব আট হাজার ৩১ ভোট ও ছাত্রদল থেকে শাফায়াত হোসেন দুই হাজার ৬৪৯ ভোট পেয়েছেন।

এজিএস পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৬ হাজার ৯৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাজ্জাত হোছেন মুন্না পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট।

এ ছাড়া পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে মাসুম বিল্লাহ, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে ফজলে রাব্বি তৌহিদ, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ইসহাক ভূঁঞা, সহ যোগাযোগ আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ওবায়দুল ইসলাম, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে মেহেদী হাসান সোহান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে মোনায়েম শরীফ, স্বাস্থ্য সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক পদে আফনান হাসান ইমরান, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে তাহসিনা রহমান, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক পদে তানভীর আঞ্জুম শোভন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদে জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা,, দফতর সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দফতর বিষয়ক সম্পাদক পদে জান্নাতুল আদন নুসরাত, সাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদে হারেজুল ইসলাম, সহ-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে জিহাদ হোসাইন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব, খেলাধুলা ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ শাওন বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাহী সদস্য পদে জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা, সালমান শাকিব, আকাশ দাশ, আদনান শরীফ ও সোহানুর রহমান সোহান নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের সময় বড় ধরনের কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি।

গণনা শেষে ভোর ৫টার দিকে বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে সর্বশেষ ফলাফল ঘোষণা করে চাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন।

এর আগে, ১৯৮১ সালে ছাত্রশিবির একবার চাকসুতে পূর্ণ প্যানেলে জয় পেয়েছিল। এর ৪৫ বছরের মাথায় তারা আবার চাকসুর দখল নিল। আর ছাত্রদল কখনোই চাকসুর শীর্ষ পদগুলো নিজেদের দখলে নিতে পারেনি। এবারও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে ছাড়া প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে চাকসু নির্বাচন। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৯০ পর্যন্ত মোট ছয়টি নির্বাচন হয়েছিল। এতে একবার ছাড়া ঘুরেফিরে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বামপন্থীরা জয় পেয়েছিল।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭০ সালে প্রথম ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব।

১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন।

১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন।

১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী।

১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেসময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।

১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।

কিন্তু সর্বশেষ ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হলে চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ৩৫ বছরে আর চাকসু নির্বাচন হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর