ঢাকা: ড. আহসান এইচ মনসুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক সংকটময় মুহূর্তে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নেন তিনি। সেই হিসাবে দায়িত্বে আছেন ১৪ মাস ধরে। আর এই ১৪ মাসে উনি বিদেশ সফর করেছেন ১৪ বার। এসব সফরে উনার বিদেশে কাটানোর সময় হতে চলেছে একশ দিন! আগের কোনো গভর্নরের এত অল্প সময়ে এতদিন বিদেশ থাকার নজির নেই। ফলে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং ব্যাংকাররা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ড. আহসান এইচ মনসুর চলতি অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে ১৯ তারিখ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকবেন। সেখান থেকে ১৯ অক্টোবর যাবেন সিঙ্গাপুর। আর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার কথা ১ নভেম্বর। সেই হিসাবে তিনি চলতি মাসেই ২২ দিন ছুটি কাটাবেন। ফলে তার যোগদানের সময় থেকে নভেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত বিদেশে থাকার সময় দাঁড়াবে ১০০ দিন।
গত ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যু করা এক স্মারক থেকে জানা গেছে, গভর্নর ড আহসান এইচ মনসুর আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের (ডব্লিউবিজি) বোর্ড অর্ব গভর্নরস ও আন্তর্জাতির্ক মুদ্রা তবহিল (আইএমএফ) এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন। সেজন্য তিনি ১০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশ সফরে থাকবেন।
জানা গেছে, ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এর আগে তিনি অন্তত ১৩ বারে ৭৮দিন দেশের বাইরে অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি অন্তত ১০টি দেশে সফর করেছেন। এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশগ্রহণে দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্র, মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধিবিষয়ক সম্মেলনে ভারত, এসইএসিইএন গভর্নর সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়া, ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ডের কাউন্সিল সভায় জিবুতি, অর্থনীতি ও রাজস্ব নীতিবিষয়ক আলোচনায় জাপান, ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম ও গ্লোবাল গুড প্র্যাকটিস সম্মেলনে লন্ডন, গ্লোবাল সুকুক ফোরাম ও চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারসংক্রান্ত বৈঠকে দুবাই সফর করেন। যা অতীতের কোনো গভর্নরের বিদেশ সফরের তুলনায় রেকর্ড।
ব্যাংকাররা জানান, আগের কোনো গভর্নরের এত বিদেশ সফরের নজির নেই। এমন অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করলেও এবার সরাসরি গভর্নর অংশ নিয়েছেন। এমনকি বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বা শাখা উদ্বোধনের মতো গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানেও তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। অথচ তার টেবিলে ফাইলের স্তূপ পড়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গভর্নর অফিসিয়াল কাজে বাইরে গেছেন। যেখানে সরকারের অনুমোদন রয়েছে। তার এই বিদেশ সফরকালে ডেপুটি গভর্নর-১ নূরুন নাহর দায়িত্ব পালন করছেন। কাজেই কাজের স্তূপ জমে থাকার কথা নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশ সফর দিয়ে তার কাজের মূল্যায়ন করা যাবে না। গভর্নরের কাজের মূল্যায়ন করতে হবে সার্বিক অর্জন দিয়ে। দায়িত্বপালনকালীন তিনি কী কী অর্জন করেছেন সেটাই আসলে দেখার বিষয়।’