Wednesday 29 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাম ও নেতৃত্বে পরিবর্তন
‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’র পুনর্গঠিত কমিটি আসছে

কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৩

জাতীয় ছাত্রশক্তি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নাম পালটে জাতীয় ছাত্রশক্তি নির্ধারিত হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর সংগঠনের নতুন নাম প্রকাশ করা হলেও নতুন কোনো কমিটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি বাড়াতে শিগগরিই কমিটি প্রকাশ করা হবে বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রসংগঠনটির একাধিক নেতা।

২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। দলটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবি শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা ও মারামারি হয়। এর পর নানা সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা এবং পরবর্তী সময়ে ডাকসুতে শোচনীয় পরাজয়ের বাস্তবতা দেখেছে দলটি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং অন্যান্য দলের কর্মীদের অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন কারণে সংগঠনটির পুনর্গঠন প্রয়োজন বলে মনে করছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা। সেজন্য তারা কিছু উদ্যোগও নিয়েছেন।

উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হলো- ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নাম পালটে ‘জাতীয় ছাত্রশক্তি’ নামকরণ, দলটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে রদবদল আনা। সেইসঙ্গে দলের স্লোগানেও আসছে পরিবর্তন। ‘শিক্ষা, ঐক্য, মুক্তি-মুক্তি’ পরিবর্তন করে ‘স্টুডেন্ট ফাস্ট, বাংলাদেশ ফাস্ট’ স্লোগানকে সামনে রেখে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম-সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ সাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই। এছাড়া দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিতে চাই।’

পুরোনো নামেই ফিরছে তারা

২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’ নামে একটি ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল। সেটির নেতৃত্বে ছিলেন গতবছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির শিক্ষার্থীদের একাংশ। আত্মপ্রকাশের দিনেই তারা হয়েছিলেন ছাত্রলীগের হামলার শিকার।

ওই সময় বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ছিলেন ছাত্রসংগঠনটির সদস্য সচিব আর আহ্বায়ক ছিলেন এনসিপির বর্তমান সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল- শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পরিসর ও সংস্কৃতি নির্মাণ, শিক্ষার্থী কল্যাণ, ছাত্র-নাগরিক রাজনীতি নির্মাণ ও রাষ্ট্র-রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন।

সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সদস্য সচিব ছিলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক মো. আবু বাকের মজুমদার। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম স্থগিত এবং কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।

এ নিয়ে বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-সদস্য সচিব মোহাম্মদ সাকিব বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বর্তমান এনসিপি’র নেতাদের একটা ভালো সম্পর্ক আছে। আমরা জুলাই আন্দোলনে একসঙ্গে লড়ে আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়েছি। সেই একই নেতাদের সঙ্গে আমরা এখন কাজ করছি। তাই তাদের মঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অস্বীকার করার কিছু নেই।’

এবার নেতৃত্বে থাকছেন যারা

নামের পাশাপাশি ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বেও আসছে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন দেখা যাবে। কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দেখা যেতে পারে বাগছাসের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জাহিদ আহসানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেন আবুবাকের মজুমদার। তিনি বাগছাসে কেন্দ্রীয় আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও বাগছাসের ঢাবি শখার সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদে দায়িত্ব পালন করা লিমন মাহমুদ হাসান এবার কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকতে পারেন।

জাতীয় ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে দেখা যেতে পারে বাগছাসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব পালন করা তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরীকে। সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেতে পারেন আল আমিন সরকার। তিনি বাগছাসের ঢাবি শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেতে পারেন মোহাম্মদ সাকিব।

এছাড়াও বাগছাসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আশরেফা খাতুন, মহির আলমও থাকতে পারেন জাতীয় ছাত্রশক্তির গুরুত্বপূর্ণ পদে। তবে বাগছাসের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়কের দায়িত্ব পালন করা আব্দুল কাদের জাতীয় ছাত্র শক্তিতে না থাকার সম্ভাবনা-ই বেশি বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

এনসিপির সহযোগী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এনসিপির ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচিত হলেও কাগজে-কলমে তারা কখনো সেটি প্রকাশ করেননি। তারা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তবে জাতীয় ছাত্রশক্তি এনসিপির সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠন হিসেবেই পরিচয় প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। সংগঠনের এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনসিপির অনুষ্ঠান থেকেই জাতীয় ছাত্রশক্তির নাম প্রকাশিত হয়েছে। এনসিপি নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহসহ সবাই এই ছাত্রসংগঠন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এবার আমরা এনসিপির সহযোগী সংগঠন হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর