Tuesday 11 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘‘সিগারেটের কর স্তরে ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দের ফাঁদে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব’’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৪১ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:০৯

ভার্চুয়াল টকশোতে বক্তারা

ঢাকা: সিগারেটের মূল্য নির্ধারণে ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দগুচ্ছকে ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাই এর জন্য দায়ী।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) যৌথ উদ্যোগে ‘সিগারেটের মূল্য নির্ধারণে তদুর্ধ্ব এর ব্যবহার ও তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজি’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল টকশোতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর (বিইআর) সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহিম খলিল। গবেষণায় উঠে আসে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে তদুর্ধ্ব শব্দটি যুক্ত থাকায় কোম্পানিগুলো বিদ্যমান মূল্যস্তরের মাঝামাঝি একাধিক মূল্য ও ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেক ব্র্যান্ডের সিগারেট নির্ধারিত মূল্যের থেকে মূল্যস্তরভেদে ন্যূনতম ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে। এই অতিরিক্ত মূল্যের ওপর কোনো করারোপ না করায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্যর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, গণমাধ্যমকর্মী ও তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা, বিএনটিটিপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা ইসলাম। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান তামাক কর আদায় ব্যবস্থা ও তামাক কর কাঠামো জটিল ও বহুস্তরবিশিষ্ট। পাশাপাশি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘তদূর্ধ্ব’ শব্দটি এই সামগ্রিক ব্যবস্থাকে আরও জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ করে তুলছে। এই একটি শব্দ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদেরকে অধিক মূল্যে সিগারেট বিক্রয়ে বাধ্য করছে । এ ছাড়া প্রতিবছরই বাজেট ঘোষণার পরপরই বর্ধিত মূল্যে পুরাতন অর্থবছরের সিগারেট বিক্রয় করে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছে।‘

ফাহমিদা ইসলাম বলেন, ‘একই মূল্যস্তরের মধ্যবর্তী মূল্যের সিগারেট বাজারজাত করায় ভোক্তারা তুলনামূলক কম মূল্যের সিগারেটে শিফট করার সুযোগ পায়। ফলে মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব ভোক্তাদের ওপরে পড়ে না ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের যে তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা রয়েছে সেটি ব্যহত হয়। এ ছাড়া তিনি তামাক কর আদায় ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’

সুশান্ত সিনহা বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষেই নতুন নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করে। মূল্য নির্ধারণে বিদ্যমান ‘তদুর্ধ্ব’ শব্দটির ব্যবহার করে বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি দেশীয় কোম্পানিগুলোও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নীতিগত ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে নীতিনির্ধারকদেরকে অভিহিত করা প্রয়োজন।’ পাশাপাশি তিনি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও অধিক কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।

এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান দূর্বল কিছু নীতি পরোক্ষভাবে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর (এনবিআর) সভায় ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের যুক্ত রাখার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে মানা হয় না। গণমাধ্যমকর্মীরা মিডিয়ায় তামাক কোম্পানির আইন লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরলেও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই বিষয়গুলোকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফলে তামাক কোম্পানিগুলো আইন বাস্তবায়নের দুর্বলতার সুযোগ নেয়।’

পরিশেষে তিনি তামাক কোম্পানির সকল অপকৌশল বন্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারকে গবেষণা ভিত্তিক তথ্য প্রদানের আহ্বান জানান।

বিজ্ঞাপন

১২ কর্মকর্তাকে বদলি করল ইসি
১১ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪৬

আরো

সম্পর্কিত খবর