Tuesday 18 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেকায়দায় পুলিশ
‘সন্দেহজনক’ পিস্তলটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র, নাকি খেলনা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:৫১

এনসিপি নেতাদের কাছ থেকে উদ্ধার ‘সন্দেহজনক’ পিস্তল। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: রংপুরে স্কুলছাত্রকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই নেতাকে গ্রেফতারের ঘটনায় মহানগর পুলিশ দ্বিধাগ্রস্ত। উদ্ধারকৃত পিস্তলটি আসল আগ্নেয়াস্ত্র, নাকি খেলনা— এ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যালেস্টিক পরীক্ষার জন্য এটি ল্যাবে পাঠানো হবে। যদি আসল প্রমাণিত হয়, তবে অস্ত্র আইনের অধীনে অতিরিক্ত মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাত প্রায় ৮টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্ক মোড়ে প্রেমঘটিত পূর্বশত্রুতার জেরে দুই স্কুলছাত্রের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। খবর পেয়ে এনসিপির রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির সদস্য রাগীব হাসনাইন (৩০) এবং সমর্থক রাকিবুল ইসলাম ওরফে তুষার (২৮)সহ কয়েকজন মোটরসাইকেলে সেখানে পৌঁছান। কথপোকথনের এক পর্যায়ে তুষার কোমর থেকে পিস্তল বের করে আরাফ গণি নামের এক স্কুলছাত্রের মাথায় ঠেকিয়ে হুমকি দেন। এই দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রসহ অনেকে ছুটে এসে তুষার ও রাগীবকে ঘিরে ফেলেন। এ সময় বাকি সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু দু’জনকে স্থানীয়রা পিটুনি দিয়ে ধরে পুলিশে খবর দেন। পরে মেট্রোপলিটন তাজহাট থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেন, ‘তুষার পিস্তল বের করে ছেলেটির মাথায় ঠেকিয়েছে, যা দেখে সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমরা তাদের ঘিরে ফেলি এবং পুলিশে সোপর্দ করি।’ এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

এদিকে, গ্রেফতার দু’জনকে ছাড়িয়ে নিতে রাতেই থানায় ছুটে যান এনসিপির নেতারা। মধ্যরাত পর্যন্ত তারা থানায় অবস্থান। এমনকি তারা অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে আলোচনাও করেন। এনসিপির রংপুর মহানগর যুগ্ম সমন্বয়কারী আলাউদ্দিন কাদেরি বলেন, ‘তুষারের ভাগনেদের সঙ্গে পার্ক মোড়ে গণ্ডগোল হয়। সেই খবর পেয়ে তারা সেখানে যায়। কিন্তু একটা মব সৃষ্টি করে তাদের কোমরে খেলনা পিস্তল ঢুকিয়ে দিয়ে থানায় নিয়ে যায়। যা উদ্ধার হয়েছে তা অস্ত্র নয়, খেলনা। প্রশাসন এটি যাচাই করে বলতে পারবে। আমরা শুনেছি, তারা অস্ত্র নিয়ে আসেনি।’

অপরদিকে তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, ‘ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র আরাফ গণির বাবা আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। ওই মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলায় অভিযোগ রয়েছে মারামারি, হুমকি এবং ভয়ভীতি সৃষ্টির।’

রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, অস্ত্রটিতে গুলি রাখার জায়গা নেই। কিন্তু দেখতে অবিকল আগ্নেয়াস্ত্রের মতো। এক্সপার্টের মতামত লাগবে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ব্যালেস্টিক রিপোর্টের জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। রিপোর্টে যদি আসল অস্ত্র প্রমাণিত হয়, তাহলে অস্ত্র আইনের অধীনে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে।’ তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মোট চারজনের নামে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এই ঘটনা রংপুরের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রেম-শত্রুতা থেকে শুরু হয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে রূপ নেওয়া এমন ঘটনা এলাকায় অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। এনসিপির মতো নতুন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল হতে পারে বলে দলীয় নেতারা দাবি করছেন। তবে পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে পুরো ঘটনা উন্মোচন করার অঙ্গীকার করেছে। তারা বলেছে, যাতে নির্দোষরা হয়রানির শিকার না হয় এবং অপরাধীরা শাস্তি পায়।