Wednesday 26 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড
‘আল্লাহ সবাইকে প্রাণে বাঁচাইছে, এটাই অনেক’

মেহেদী হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:১৭

কড়াইল বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘সবকিছু কেড়ে নিয়া আল্লাহ আমাকে, আমার পরিবারসহ সবাইকে প্রাণে বাঁচাইছে- এটাই অনেক। যে সম্পদ অমরা হারাইছি হয়তো ভবিষ্যতে পাব। কিন্তু প্রাণ হারালে তো আর কেউ ফিরে পেতাম না।’— সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ঘর হারিয়ে নিঃস্ব লিটন মিয়া।

৪০ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে বসবাস করছেন লিটন। বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানসহ কয়েকটি রুম নিয়ে কড়াইল বস্তিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু সকলের প্রাণ বাঁচিয়ে আগুন কেড়ে নিয়েছে সব। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এর আগেও এখানে দু’বার আগুন লেগেছিল। সেসময়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। তবে এবারের আগুন ছিল ভয়াবহ। আমার তিনটা রুমের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

আগুন কেউ পরিকল্পিতভাবে লাগিয়েছে কি না? জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম নেভাতে। কিন্তু পাশাপাশি টিন ও কাঠের ঘরগুলো হওয়ার রক্ষা করতে পারিনি। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে সব পুড়ে গেছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে কয়েকশ’ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র কিছুই যেন অবশিষ্ট নাই। পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে তাদের। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা যেন ক্ষুধার্ত না থাকে সেজন্য কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তারা নিয়ে আসছেন রান্না করা খাবার। এদিকে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপের মাঝে টিন ও লোহালক্কর খুঁজে আলাদা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। আবার নতুন করে স্বপ্ন বোনার আশায় পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন তারা। তবে দুর্ঘনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যেজন্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেও অনেক সময় নষ্ট হয় ফায়ার সার্ভিসের।

বাসায় কাজ করেন রাহেলা বেগম। তার স্বামী রিকশাচালক। গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। আগুনে নিঃস্ব হয়ে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কাজ থেকে ফিরে দেখি আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। আমার এক ছেলে ও মেয়ে আছে। তিন বছর ধরে আমি এখানে। আগুনে আমার সব পুড়ে গেছে। তবে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। গতকাল রাতে খোলা আকাশের নিচে মাঠে কাটিয়েছি। এখন কি করব বুঝতেছি না।’

সব হারিয়ে নিঃস্ব আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুনে আমার সব পুড়ে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। সিলিন্ডার থেকে আগুন ধরেছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি নেভানোর। কিন্তু বাতাসের কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে প্রথমে আগুন লেগেছে তার পাশেই আমার ঘর ছিল।’

কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেছে কি না?- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সাহায্য করতে আসেনি। কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার সাহায্য না করলে খুবই সমস্যায় পড়ে যাব।’

এদিকে আজও বস্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা থাকা ধোঁয়া বা ছাইয়ের স্তূপ থেকে যাতে নতুন করে কোনো অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত এটা জানা যায়নি। কতগুলো ঘর এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত আশা করছি এটা জানা যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় ৫ ঘণ্টা পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর নির্বাপণ সম্পন্ন করে ফায়ার সার্ভিস। তবে আগুনের এই ঘটনায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।