ঢাকা: বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে ঢাকার করা অনুরোধ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারত।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে ভারত।
জয়সওয়াল বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে নতুন করে একটি অনুরোধ এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর এই অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। গতবছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।
তখন থেকে দেশটির অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দুই দফায় ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এবারই প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাওয়ার তথ্য স্বীকার করেছে দিল্লি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা একটি অনুরোধ পেয়েছি। এই অনুরোধটি চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ— বিশেষ করে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাব।’
গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর চলতি মাসে তাকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে দিল্লির কাছে প্রথমবারের মতো একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো চিঠি চলমান বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভারতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জয়সওয়াল।
এদিকে ভারতকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে এদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতকে পাঠানো সর্বশেষ অনুরোধের জবাব বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। তবে চিঠি পাঠানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই জবাব মিলবে- এমনটি ধরে নেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, ঢাকার অনুরোধ পাঠানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা জবাব দেবে। তবে আমরা জবাবের প্রত্যাশা করছি।’
উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (আইসিটি-১)-এর রায়ের পর ঢাকা আনুষ্ঠানিকভাবে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছে ভারতের উদ্দেশে, যা নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। তিনি নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশের অনুরোধটি দুই দেশের বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনেই পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গতবছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য দিয়ে সহযোগিতা করায় সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।