‘জাতীয় ঐক্য’ নিয়ে সোচ্চার ড. কামাল, ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশ
২৩ আগস্ট ২০১৮ ১৯:৩১
।। আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ভিশন টুয়েন্টি-টুয়েন্টি ওয়ানের বিপরীতে এবার ২০২১ সালে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নতুন একটি প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। দেশের একটি সুপরিচিত রাজনৈতিক মহল এই উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে এরই মধ্যে তারা মাঠে নেমেছেন।
এ প্রচেষ্টার নাম দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ঐক্যের মূল স্লোগান- অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি। এছাড়া আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানো, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপও নিতে চায় এই জাতীয় ঐক্য।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এবং হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অংশের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের নেতাদের আলোচনা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে এখনও বৈঠক হয়নি। ঈদের ছুটি শেষ হলেই এসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন ড. কামালসহ জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতারা।
উচ্চ পর্যায়েই কেবল নয়, তৃণমূলেও এই প্রচেষ্টার বার্তা পৌঁছে দিতে চান এর উদ্যোক্তারা।
রাজনৈতিক এই প্ল্যাটফর্মে অনেককে নিয়ে আসতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশ ডেকেছেন তারা। এই সমাবেশকে বড় উপলক্ষ মনে করছেন জাতীয় ঐক্যের নেতারা। সূত্র জানায়, এই সমাবেশকে সফল করতে ঈদের ছুটির পরপরই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যের নেতারা।
এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তনে সকলেই আগ্রহী। ২০২১ সালে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সকলেই এক মঞ্চে আসার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন।
তিনি জানান, জামায়াত বাদে সকল রাজনৈতিক দল পটপরিবর্তনের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি।
জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও আহ্বান জানানো হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা গেছে, আগামী শনিবার (২৫ আগস্ট) গণফোরাম কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যের নীতিনির্ধারণী একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাতীয় ঐক্যের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে অস্থিরতার কারণ সম্পর্কে সরকারেরই সব জানা। তারপরও জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ড. কামাল। তিনি প্রয়োজনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চাইতে পারেন বলে জাতীয় ঐক্যের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ সম্পর্কে ড. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে সাক্ষাৎ চাওয়া অপরাধের কিছু নয়। তিনি দেশের কর্ণধার। তার সঙ্গে যে কেউ সাক্ষাৎ করতে চাইতে পারেন। এ ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে, অন্য একটি সূত্র জানায়, ৪৫ জেলার জাতীয় ঐক্যের কমিটিকে (রাজনৈতিক সংগঠন) ২২ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশ সফল করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও অব্যাহত রাখা হয়েছে। আর ২২ সেপ্টেম্বরের এই সমাবেশের পর পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করবে জাতীয় ঐক্য।
জাতীয় ঐক্যের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোস্তফা আমিন সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘২২ সেপ্টেম্বর আমাদের বড় একটি শোডাউন হবে।’ সমাবেশে কত সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটা বলা মুশকিল। আশা করি, জামায়াত বাদে দেশের সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আমাদের মঞ্চে আসবে। তবে ক্ষমতাসীন হিসেবে আওয়ামী লীগও হয়তো আমাদের সঙ্গে আসবে না।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আরও পড়ুন
জাতীয় ঐক্য প্রচেষ্টার উপকমিটি গঠন
জাতীয় ঐক্যের নামে অরাজকতা সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে
দ্বন্দ্ব মিটলো বি. চৌধুরী-ড. কামালের
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ মিনিট সময় চান ড. কামাল
এই মাটি স্বৈরাচারের জন্য নয়: ড. কামাল