মাইদুল ইসলামের মুক্তি, চাকরি পুনর্বহাল দাবিতে ৫১ শিক্ষকের বিবৃতি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৩৬
।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে গ্রেফতার ও পরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলামের মুক্তি ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন শিক্ষক।
তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক’র পাঠানো এক বিবৃতিতে এই মুক্তির দাবি জানানো হয়।
বিবৃতি বলা হয়, শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেওয়াকে অন্যায় হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে এবং তার শাস্তিস্বরূপ শিক্ষককে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। কেবল তা-ই নয়, তাকে চাকরি থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অথচ একটা সময়ে এই সমাজে শিক্ষকদের এমন প্রতিবাদী ভূমিকাকে যথোচিত এবং গৌরবজনক হিসেবেই গণ্য করা হতো। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মতভিন্নতার কারণে কাউকে হুমকি দেয়া হবে, তাকে তার কাজের জায়গায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে, তার চাকুরিচ্যুতির দাবি উঠবে এমনটা মেনে নেয়া যায়না। পাবলিকের পয়ঁসায় চলছে যে প্রতিষ্ঠান, যার সাথে যুক্ত শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা নিজেদের জাতির বিবেক বলে মনে করেন। সেখানে এধরনের কণ্ঠরোধী চর্চা আমাদের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: চবি শিক্ষক মাইদুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত
এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় উল্লেখ করে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে ভিন্নমতকে দমনের, ভয়ভীতির দেখানোর, নিপীড়নমূলক যে চর্চা শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ঘটনাটি তারই অংশমাত্র। আজকের বাংলাদেশে দাগী এমনকি খুনের আসামীর জন্য রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষমার আইনটি প্রয়োগ করেন, অথচ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মত প্রকাশের জন্য জেলে যেতে হয়। আমরা এই হুমকি এবং জেলজুলুমের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।
এতবড় ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর কোনও নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বলা হয়, একদিকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মাস্তানতন্ত্র, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামোর নিবর্তনমূলক প্রয়োগ এবং সার্বিকভাবে সমাজে ভয় ও তোষণের রাজনীতির সম্প্রসারণ আমাদের ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে সাদাকে সাদা বলবার সাহসটুকুও আমরা হারাতে বসেছি। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী এবং দেশের আপামর জনসাধারণকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে আহ্বান জানাই। সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলজুলুম থেকে মাইদুল ইসলামকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়া এবং তাকে হুমকি-প্রদানকারীদের সনাক্ত করে অতিসত্বর বিচার এবং শাস্তির আওতায় আনা হোক। বাংলাদেশে শুভবুদ্ধির জয় হবে এই বিশ্বাস আমাদের আছে।
আরও পড়ুন: আইসিটি মামলায় চবি শিক্ষক কারাগারে
বিবৃতি দেওয়া শিক্ষকরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, রোবায়েত ফেরদৌস, আবদুর রাজ্জাক খান, মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুন্নবী সামাদী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সৌভিক রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম হোসেন হাবীব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌম্য সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটুক্তির অভিযোগে গত ২৩ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারায় বিরুদ্ধে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম। মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন নেন মাইদুল। ওই জামিনের মেয়াদ শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর মাইদুল চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো.ইসমাইল হোসেনের আদালতে আত্মসর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সারাবাংলা/কেকে/এনএইচ