Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মন্ত্রীরা বৈঠকে বসলেই থেমে যেত ‘অযৌক্তিক’ আন্দোলন


২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৪৩

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংস্কারসহ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন চলছে আজ (২৯ অক্টোবর)। এতে টানা দুদিন গণ-পরিবহন সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ গোটা দেশ। কিন্তু তাদের এ আন্দোলন অযৌক্তিক বলে মনে করছেন পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট খাতের নেতারা। আবার আন্দোলনকারীরা বলছে, যৌক্তিক-অযৌক্তিক নয়, সরকারের আচরণে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এই ধর্মঘট।

পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, শ্রমিকরা আইন সংস্কারের জন্য যে দাবি করছে সেগুলোর যৌক্তিকতা থাকলেও চলমান ধর্মঘটের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আইনটি এখন সংস্কার করা সম্ভব নয়, পরবর্তী সংসদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আন্দোলনের প্রথম দিনে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক মন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, এ আইন এখন সংস্কার সম্ভব নয়। তারপরও যখন ধর্মঘটের নামে সড়কে পরিবহনখাত জিম্মি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয় তখন আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট, ভোগান্তিতে মানুষ
                   দ্বিতীয় দিনেও শ্রমিকদের নৈরাজ্য

সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, যেহেতু আইন হয়ে গেছে তাই পরবর্তী সংসদ অধিবেশনের আগে আর এটি সংশোধন সম্ভব নয়। সুতরাং, সাধারণ মানুষ হতে শুরু করে আমরা যারা মালিক রয়েছি তাদেরও কষ্ট। তবে মন্ত্রী শাহজাহান খান তো শ্রমিকদের ডেকে এনে বোঝাতে পারতো, বলতে পারতো, যেহেতু আমরা সবাই এক পার্টি করি, হয়েছে তো, এখন তোমরা ব্রেক করো। কিন্তু কে শুনে কার কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রী (শাহজাহান খান) তো শ্রমিকদের বলতে পারতো ১২ ঘণ্টা আন্দোলন করছো এখন ব্রেক করো। কিন্তু তিনি তো তা করছেন না। এতে যে জন ভোগান্তি, একটা বাচ্চা মারা গেল, শেষ পরিণতি কী?’

মহাখালী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকরা গাড়ি না চালালে আমাদের গাড়ি অচল হয়ে যায়। আমরা বিনিয়োগ করি ঠিকই কিন্তু আমাদের চালিকা শক্তি হল শ্রমিক। এখন শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে তাদের পদক্ষেপ নিয়েছে আমরা তো এটা কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু আমরা বারবারই সরকার এবং প্রশাসনকে বলে আসছি যে আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বসেন আলাপ করেন। তাদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে একটা জায়গায় যান। তাই আমি মনে করি তাদেরকে নিয়ে বসলেই এটার সমাধান হয়ে যাবে। তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় না বসার কারণে আজকের এ পরিস্থিতি। তারাও সরকারের দল করে কিন্তু তাদেরকে আলাপ আলোচনায় ডাকা হয় না। এসব কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তবে মন্ত্রী শাহজাহান খান সরকারের মন্ত্রী হওয়ায় তিনি শ্রমিকদের পক্ষে কোনো কথা বলতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

এদিকে আন্দোলনকারী নেতারা বলছেন, তাদের দাবিগুলো ১ দিনে হয়নি। আন্দোলনের প্রায় ১ মাস আগ থেকে তারা বিভিন্নভাবে সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু কেউ তাদেরকে দাবি দাওয়ার ব্যাপারে আলোচনায় ডাকেনি। এতে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পাত্তা দেওয়া হয়নি মনে করে নেতাদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। যে কারণে এ আন্দোলন। তবে তাদের মত, সরকারের পক্ষ থেকে যদি তাদেরকে ডেকে আলোচনায় বসে ‘এ আইন এখন সংস্কার করা সম্ভব নয়’ এটি বুঝিয়ে বলা হতো তাহলে ধর্মঘট হতো না। কিন্তু ধর্মঘট চলার পর সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা তাদের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করেন তারা। তাই এটি প্রত্যাহারও সম্ভব নয় বলেও ঘোষণা দিয়েছেন সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ।

তবে আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনকারী শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, তারা কর্ম বিরতি পালন করছেন। কিন্তু কর্ম-বিরতি হলে অন্য পেশার লোকজনকে সামাজিকভাবে হেয় করার কিংবা তাদের ক্ষতি করার অধিকার কি শ্রমিকদের আছে কিনা সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য মিলেনি সাংগঠনিকভাবে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সারাবাংলাকে বলেন, সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে আমরা বিব্রত। কারণ তিনি আন্দোলনের আগে আমাদেরকে ডেকে এসব কথা বলতে পারতেন যে, আইন এখন সংশোধন সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি তা বললেন, আন্দোলন শুরুর পর। তাহলে এখন কেন একথা। আমরা তো এক মাস আগ থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি দাবি নিয়ে। তখন তো কেউ কোনো কথা বলেনি। তাই আজ ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

এদিকে, আন্দোলনের অযৌক্তিকতা তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল।

তিনি বলেন, আমরা বার বার লক্ষ্য করেছি পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে একের পর এক অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গেলেই ধর্মঘট, অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তারা। শ্রমিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে চরম ভোগান্তিতে ফেলে দেয় নগরবাসীকে। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় বার বার মানুষকে জিম্মি করে আইনকে বাধাগ্রস্ত করে। যা কখনো মেনে নেয়া যায় না।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। ওই সময় ৯ অক্টোবর, বিকেল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু ২৬ অক্টোবর কেরানীগঞ্জে ট্রাকচালক-শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার একই দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এরপরই এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা।

সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম

আরও পড়ুন

ঢাকা থেকে ছাড়ছে না দূরপাল্লার বাস, বিপাকে যাত্রীরা
২৮-২৯ অক্টোবর সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক
সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট, ছাড়ছে না দূরপাল্লার বাস
আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই, ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন
ধর্মঘট প্রত্যাহার সম্ভব নয় : শ্রমিক নেতা
শ্রমিকদের নৈরাজ্য, গাড়ি বের করার ‘শাস্তি’ মুখে-শরীরে পোড়া মবিল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর