অবশেষে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে সেই হৃদয় সরকার
৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৫২
।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
মায়ের কোলে চড়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত হৃদয় সরকার অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত ডিন’স কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- নিয়মের গ্যাঁড়াকলে থমকে যাবে মা-ছেলের লড়াই!
ডিনস কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, বৈঠকে ঢাবি ভর্তিতে বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বাইরেও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছুদের প্রতিবন্ধী কোটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে এমন সংবাদ জানালে হৃদয় সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানাই। তারা যুগোপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তারা অনুপ্রেরণা পাবে। তারা ভাববে যে আমি যদি পড়ালেখা করি তাহলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারব। আমি মনে করি এই অনুপ্রেরণায় যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তারা অনুপ্রেরণা পাবে।’
হৃদয়ের মা সীমা সরকার বলেন, ‘ভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সব মায়ের কাছে আমার আবদার তাদের ছেলেদের যেন অবহেলা না করে। এখন ঢাকা ভার্সিটির পথ খোলা সবাই পড়তে পারবে। কিন্তু আগ্রহ নিতে হবে মাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে ছয় বছর পর্যন্ত প্লে-নার্সারিতে হাতে খড়ি দিয়েছি। কেজিতে নিয়া তারে স্কুলে ভর্তি করি। তহন অনেক লোকে বলছে সে হাঁটতে পারে না, বসতে পারে না; তার মা’র পড়ার জন্য আগ্রহ। আমি কোনো কথা শুনি নাই। না শুইনা আমার ছেলেরে নিয়া পড়াশুনা চালায়ে গেছি। আমার খুব স্বপ্ন ছিল তাকে ঢাকা ভার্সিটিতে একটা সাবজেক্টে পড়াব। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। অ্যাহনও আমি হাতে কাগজ পাই নাই, পাইলে আমি আরও খুশি হব। ডিন স্যার, ভিসি স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী কোটার বিধিতে শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে। পূর্বে শুধু দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের কোটার সুযোগ দেওয়া হত।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী এতদিন আমাদের নীতির বাইরে ছিল। আমরা বিদ্যমান যে কোটা সুবিধা নীতিমালা সেখানে এইটা সংযোজন করেছি। যাতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঞ্চিত না হয়।’
এর আগে, ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেও শ্রবণ, বাক বা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী না হওয়ায় হৃদয় প্রতিবন্ধী কোটা পাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে। গত মঙ্গলবার (সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে) সারাবাংলা’য় এ নিয়ে খবর প্রকাশ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। চিকিৎসকসহ মানবাধিকারকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর বাইরেও যারা প্রতিবন্ধী, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে প্রতিবন্ধী কোটা না পাওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর একদিন পরই হৃদয়কে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো ঢাবি প্রশাসন।
আরও পড়ুন- ‘হৃদয়কে ঢাবিতে ভর্তি না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন নেত্রকোনার হৃদয় সরকার। ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত হৃদয় এসেছিলেন মায়ের কোলে চড়ে। ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে হৃদয় মেধাক্রম পান ৩৭৪০।
সোমবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ২টায় কলা অনুষদে ‘খ’ ইউনিটে উত্তীর্ণ ওয়ার্ড, খেলোয়াড় ও প্রতিবন্ধী কোটাধারীদের মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য ডাকা হয়। অনুষদের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে ডাকা হয়েছে মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য। এর মধ্যে ৪৫৮৪ মেধাক্রমেও রয়েছেন একজন। কিন্তু ৩৭৪০ মেধাক্রমে থেকেও হৃদয় সরকার মনোনয়ন সংগ্রহের ডাক পাননি।
আরও পড়ুন- মায়ের কোলে চড়ে আসা সেই ছেলে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় পাস
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, নিয়ম অনুযায়ী দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্যই কেবল প্রতিবন্ধী কোটা বরাদ্দ ঢাবিতে। এর বাইরে অন্য কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধীর জন্য ঢাবিতে কোনো কোটা দেওয়া হতো না। এই নিয়ম অনুযায়ী সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েও হৃদয়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ঢাবিতে ভর্তির দরজা। তা নিয়ে সারাবাংলার কাছে হতাশাও জানান ছোট বেলা থেকেই শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করে আসা হৃদয়।
শেষ পর্যন্ত আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাবি প্রশাসন হৃদয়কে প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির সুযোগ দেওয়ায় তার সেই হতাশা কেটে যাবে নিঃসন্দেহে।
সারাবাংলা/কেকে/এমও/টিআর