Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একবছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:১১

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এর আগে, ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১২ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে খেলাপি ঋণ বাড়ে যথাক্রমে ৯ হাজার ৫৮০ কোটি ও ৯ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হয়। ফলে গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো বড় অংকের ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করায় বছরের শেষ তিন মাসে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৬ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরের শেষ তিন মাসে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা।

 আরও পড়ুন: ঋণ খেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ

সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর, ১ ডিসেম্বর ছিল প্রার্থিতা বাছাইয়ের শেষ দিন পর্যন্ত চলে প্রার্থীদের ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক। প্রায় ২৫০ আবেদন আসে ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি উচ্চ আদালত প্রার্থীদের পুনঃতফসিল করে দেন। এতে শেষ তিন মাসে (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ কমেছে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অথচ ডিসেম্বের তা কমে হয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। তবে, এটি খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। এর বাইরেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হিসাব থেকে বাদ দিতে অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। এগুলোও খেলাপি ঋণ।

ঋণ পুনঃতফসিল

এ ছাড়া গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ৪১টি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৯টি এবং অবশিষ্ট বাকি ৯টি হলো বিদেশি ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়ই মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেক রয়েছে। এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩০ শতাংশেরও বেশি।

সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ১৮.৭৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৮ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ৫.৫৭ শতাংশ।

এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের ৬. ৫৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে।

খেলাপি ঋণের শীর্ষে যে ব্যাংক

সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণের শীর্ষ তালিকায় আছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপির ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে।

আরও পড়ুন:  ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা

এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকের ৯ হাজার ৩৪৪ কোটি, অগ্রণী ব্যাকের ৫ হাজার ৯৬৩ কোটি রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১১৬ কোটি ও বিডিবিএলের ৮৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হয়েছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৪.৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফারমার্স ব্যাংক (নতুন নাম পদ্মা)। এখানকার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ১৮ কোটি, ইউসিবি ব্যাংকের ১ হাজার ৯০৪ কোটি, এবি ব্যাংকের ১ হাজার ৬৬৫ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। কয়েক বছরের তুলনায় গত বছর খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। এতে ব্যাংকিং খাত আরও চাপে পড়বে। ’

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে।’ না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। ’

সারাবাংলা/জিএস/এমএনএইচ

খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর