জয় বাংলার উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেল রাশিয়ানদেরও
৮ মার্চ ২০১৯ ১৭:১৬
।। সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।
ঢাকা: আর্মি স্টেডিয়ামে জয় বাংলা কনসার্টে তখন তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে স্টেজ মাতাচ্ছে আরবোভাইরাস। হঠাৎ চোখে পড়ল কিছু রাশিয়ান পতাকা। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেল, দলবেঁধে গানের তালে মাতোয়ারা কয়েকজনের একটি দল। হাতে হাতেই রাশিয়া আর বাংলাদেশের পতাকা। কথা বলে জানা গেল, তারা সবাই রাশিয়ান! ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিদের কতটা অনুপ্রাণিত করে চলেছে এখনও, সেটি দেখার জন্য হাজির ৩৫ জন রাশিয়ানদের এই দলটি। এমন আয়োজন আর আয়োজনের উচ্ছ্বাসে তারা মুগ্ধ— জানালেন একবাক্যে।
আরও পড়ুন- জয় বাংলা কনসার্ট ২০১৯ [ফটো স্টোরি]
কথা হয় ওই রাশিয়ানদের দলে থাকা ইভান্সের সঙ্গে। বয়স আনুমানিক ৩৮-৪০। কাজ করেন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনেক শুনেছি। আমরা শুনেছি, কিভাবে তিনি জনগণের জন্য লড়াই করেছেন, দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা দেশেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছি। এবার বাংলাদেশে থাকায় তাই দেখতে এলাম, সেই ভাষণ এখনও কিভাবে অনুপ্রাণিত করে বাংলাদেশের সবাইকে।
ইভান্স আরও বলেন, রাশিয়াতে আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে সবাই জানি। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণকেও তাই আমরা বন্ধু ভাবি। বাংলাদেশে এসে সেই ভ্রাতৃত্ববোধই দেখতে পাই। আমরা বাংলা ভাষা বুঝি না, কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ যখনই শুনতে পাই, তখনই মনে হয় একজন নেতা তার দেশের জনগণকে কী পরিমাণ অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলাম। আজ আমরা যখন শুনলাম তোমাদের দেশের সবাই এই ভাষণের দিবসটি স্মরণ করছ, তখনই আমরা চলে এলাম এখানে তোমাদের সঙ্গে যোগ দিতে।
আরও পড়ুন- জয় বাংলা কনসার্টকে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেন সবাই
কনসার্টে আসা আরেক রাশিয়ান আয়মান। বললেন, তারা সবাই বাংলাদেশে একটি বহুজাতিক কোম্পানির হয়ে কাজ করতে এসেছেন। গোটা আর্মি স্টেডিয়াম তখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত। রাশিয়ান এই তরুণরাও তাতে সুর মেলালেন দুই দেশের পতাকা তুলে ধরে।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আয়মান বলেন, রাশিয়ার পর বাংলাদেশকেই আমাদের কাছে খুব আপন মনে হয়েছে। আমরা এখানে এসেছি আজ আমাদের সেই বন্ধুদের সঙ্গে কিছু মুহূর্ত কাটাতে। ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি এখানকার তরুণদের ভালোবাসা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি ভাষণ যে আসলে একটি জাতির দিকনির্দেশনা ছিল, সেটা আজ এখানে না এলে আমরা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারতাম না।
বাংলাদেশের উন্নয়নে রাশিয়াকে বন্ধু উল্লেখ করে আয়মান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে রাশিয়া বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পাশে থাকাতে আমরা রাশিয়ানরা গর্বিত। বাংলাদেশ খুব দ্রুত আরও অনেক এগিয়ে যাবে— আমরা সেই আশাই করি।
বাংলাদেশে কাটানো সময় কিভাবে উপভোগ করছেন, জানতে চাইলে আয়মান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, এখানকার আতিথেয়তা সবকিছুই খুব আপন মনে হয়। আমরা রাশিয়ানরা বাংলাদেশকে খুব আপন ভাবি। বাংলাদেশে এসে দেখলাম এখানকার জনগণও আমাদের খুবই আপন করে নিয়েছে। আমরা এতে কৃতজ্ঞ। এখানে থেকে যাওয়ার সময় আমরা অনেক সুখকর অভিজ্ঞতা সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারব, যা আমরা দেশে গিয়ে পরিবার ও বন্ধুদের কাছে গর্ব নিয়ে বলতে পারব।
এসময় পাশে থাকা আরেক রাশিয়ান বন্ধু ইয়েফস্রেনিয়া ‘জয় বাংলা’ বলে উঠলে বাকিরাও তাতে সুর মেলান।
বাংলা জানেন না রাশিয়ান এই তরুণরা। বাংলা গানের এই কনসার্ট কেমন লাগছে— জানতে চাইলে ইয়েফস্রেনিয়া বলেন, আমরা বাংলা ভাষা বুঝি না। কিন্তু সঙ্গীতের একটা আলাদা ভাষা আছে। সেই ভাষাতে অসাধারণ লাগছে এই কনসার্টের আয়োজন। দেশের তরুণরা একজন মহান নেতাকে এখনও এতটা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে, সেটা এখানে না আসলে বুঝতাম না।
আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে এসময় এই রাশিয়ানরা ভবিষ্যতেও এমন আয়োজনে আসার ইচ্ছার কথা জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তারই স্মরণে আর্মি স্টেডিয়ামে সিআরআইয়ের ইয়ং বাংলার আয়োজনে জয় বাংলা কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেল ৩টায় শুরু হয় কনসার্ট। টানা পঞ্চমবারের এই আয়োজনে এবার তরুণদের গান শুনিয়েছে দেশসেরা আটটি ব্যান্ড।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর