Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ডাইং ডিক্লারেশনে’ শম্পা নামটি বলেছেন ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী


৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:৪৬

ঢাকা: পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার সঙ্গের ‘শম্পা’ নামের একজনের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা ফেনীর সেই মাদরাসা শিক্ষার্থী। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সে চিনতে না পারলেও তাদের একজন আরেকজনকে ‘শম্পা’ নাম ধরে ডেকেছে বলে জানায় সে।

রোববার (৭ এপ্রিল) রাতে ডাইং ডিক্লারেশনে (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) এসব কথা জানায় ফেনীর ওই মাদরাসা শিক্ষার্থী। ঢামেক হাসপাতালের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্রগুলো বলছে, দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতে একজন চিকিৎসকের কাছে ওই শিক্ষার্থী এসব কথা বলে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- মাদরাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা, ২ দিন পর মামলা

এর আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীকে সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শরীরের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ দগ্ধ ওই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা ভীষণ নাজুক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, রোববার রাতে চিকিৎসকদের কাছে ‘ডায়িং ডিক্লারেশন’ দেয় ওই শিক্ষার্থী। এসময় সে বলে, পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে অন্য আরেক শিক্ষার্থীকে মারা হচ্ছে বলে তাকে ছাদে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে বোরকা ও হাতে গ্লাভস পরা চার জন উপস্থিত ছিল। তবে তারা ছেলে নাকি মেয়ে, তা ওই শিক্ষার্থী বুঝতে পারেনি।

মেয়েটি জানায়, ছাদে যাওয়ার পর ওই চার জন তাকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বলে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য নয়— এমন কথা বলার জন্য চাপ দিতে থাকে। বোরকা পরা থাকায় ওই চার জনকে চিনতে পারেনি মেয়েটি। তবে তাদের মধ্যে একজন অন্য আরেকজনকে ‘শম্পা’ নামে ডেকেছিল বলে জানায় সে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- প্রশ্নফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি করতো অধ্যক্ষ

কিভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়— সে প্রসঙ্গে মেয়েটি জানায়, আগুন দেওয়ার আগেই তার দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়। এরপর কেউ একজন কেমিক্যাল জাতীয় কিছু তার দিকে ছুঁড়ে মারে। এর পরপরই আরেকজন তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তাকে বলা হয়, এবার তুই পালা। সে অবস্থাতেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে ওই শিক্ষার্থী।

মাদরাসার অধ্যক্ষের কাছে যৌন হয়রানির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ডিক্লারেশনে মেয়েটি বলে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের পর থেকেই তার ভাই তাকে মাদরাসায় নিয়ে যেত। আগের পরীক্ষাগুলোতেও ভাই-ই তাকে পরীক্ষার নির্ধারিত কক্ষে বসিয়ে দিয়ে আসত। তবে ঘটনার দিন মেয়েটির ভাইকে মাদরাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেয়েটি মাদারাসায় পৌঁছানোর পরই তাকে ছাদে ডেকে পাঠানো হয়। আর সেখানে গিয়েই শিকার হন আগুন হামলার। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে মেয়েটি।

আরও পড়ুন- ‘আর ভিডিও করিছ না, আমার ঝিরে আইনা দে’

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা মেয়েটির শারীরিক অবস্থা ভীষণ নাজুক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার শরীরের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ দগ্ধ এবং ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ তীব্রভাবে দগ্ধ। এ অবস্থায় মেয়েটির জীবন শঙ্কার মুখে রয়েছে বলেই মত চিকিৎসকদের।

নিজ মাদরাসার অধ্যক্ষের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর গায়ে পেট্রোল ঢেলে হত্যার চেষ্টা করা হয় ওই শিক্ষার্থীকে। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলা ওই শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে ওই অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছে। তবে শিক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ অধ্যক্ষের শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছে।

আরও পড়ুন- ‘বল সব মিথ্যা, ২৭ তারিখের যৌন হয়রানি মিথ্যা’

এদিকে, শনিবার (৬ এপ্রিল) ওই শিক্ষার্থী সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের পক্ষের শিক্ষার্থীরা তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

ফেনীতে দগ্ধ মাদরাসা শিক্ষার্থী মাদরাসা শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর