‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দলিল: শিক্ষামন্ত্রী
১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:০৪
ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দলিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল তা হলো স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র।
বুধবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভাটি আয়োজন করে করে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষে কাজ করে যাওয়া সংগঠন সম্প্রীতি বাংলাদেশ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠনের সদস্যসচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের কথাও উল্লেখ করা রয়েছে। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতি সেই ঘোষণাপত্রেও ছিল। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে সেই একই নীতি অনুসরণ করবার নির্দেশ দিয়েছেন। আজকেও বাংলাদেশ একই নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি বারবার বলি আমরা কিন্তু কখনোই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হই নি।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্ব ও কাজের পরিধি যে কত মহান তা এই প্রজন্মকে জানাবার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পেতে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মসহ বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে কেউ জয় বাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নামে কোন স্লোগান দিতে পারে নি। কিন্তু বর্তমানে জয় বাংলা ও বঙ্গবন্ধু স্লোগানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
উন্নয়নমূলক বাস্তবতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের জন্য কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন তাতে কেউ কোথাও কোনো স্থানে দ্বিমত পোষণ করতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকুন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকুন, নৌকার সঙ্গে থাকুন। কারণ বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হলে নৌকার সঙ্গেই থাকতে হবে, আওয়ামী লীগের সাথেই থাকতে হবে। ভিন্ন কোথাও গেলে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেখা আর পাওয়া যাবে না।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সৃষ্টিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দাবি জানান আলোচক হিসেবে থাকা বিশিষ্টজনেরা।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপি উনার বক্তব্যে বলেন, বিএনপির ফখরুল ও রিজভিকে যদি পদ্মার ওপাড় শিবচর উপজেলাতে নেওয়া যেতো তবে তারা দেখতো বাংলাদেশ আজ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। কিন্তু বাস্তব দেখেও তারা যদি দ্বিধা সংকোচ করে অন্য কিছু বলে তাতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দৈনিক ১৮ঘন্টা কাজ করে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি জামায়াতের অন্ধরা সেই উন্নয়ন দেখতে পারে না।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, ১০ এপ্রিল আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচনা করা হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেটি রচিত হয়েছিল এই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতেই। সেই সংবিধানকে বিভিন্ন আমলে কাটাছেড়া করা হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটির মান রক্ষা করার জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন,বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যদি তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায় তবে তারা বঙ্গবন্ধুকে চিনবে, জানবে এবং বুঝবে। তখন তারাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে দেশের জন্য কাজ করে যাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন উনার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল যে সরকার গঠন করা হয় তা অস্থায়ী সরকার বলে আমি মনে করি না কারণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ীরা সেদিন সরকার গঠন করেছিলো। ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই সরকার বৈধ সরকার বলেই কাজ করেছিল যারা শপথ নেন মেহেরপুরে। সেদিন থেকে তাজউদ্দিন আহমেদের প্রস্তাবনাতে সেই সরকারের নাম দেয়া হয় মুজিবনগর সরকার হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই এই সরকার গঠন করা হয় যার মূল ভীত ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশে কোন জ্বালাও পোড়াও বা অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক ,রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক রাশেক রহমানসহ অন্যরা।
আলোচনা সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জারি করা ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করার দাবি জানান সরকারের কাছে।
অনুষ্ঠানে পিকলু চৌধুরী নির্মিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ শীর্ষক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
সারাবাংলা/এসবি