Sunday 20 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নুসরাতের জানাজায় হাজারও মানুষ, দাদির পাশেই চিরঘুম


১১ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:২৩ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ২১:১০

ফেনী: হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৬টায় সোনাগাজী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষ হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদির পাশে নুসরাত জাহানকে সমাহিত করা হয়।

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে নুসরাত মারা যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নুসরাতের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে ফেনীর উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা। বিকেলে শোকার্ত মানুষের ভিড় ঠেলে তার নিথর দেহটি পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়ির আঙিনায়।

বিজ্ঞাপন

পুরোটা পথ ছিলেন বোনের মরদেহের পাশে। সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছে আর সংজ্ঞা ধরে রাখতে পারেননি নুসরাতের ভাই। স্বজন ও সতীর্থদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাতাস ।

নুসরাতের বাবা ও ভাইয়ের কান্নায় কবরস্থানে এক হৃদয়-বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে আদরের নুসরাতকে চিরবিদায় জানান তারা। এর আগে জানাজা পড়ান নুসরাতের বাবা মাওলানা মুসা। জানাজায় উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বড় ভাই নোমান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি আলাউদ্দিন নাসিম, জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিকেএম এনামুল করিম, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ইউএনও সোহেল পারভেজসহ অন্যরা।

এর আগে, সকাল থেকে আত্মীয় স্বজনসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে নারী-পুরুষ তাদের বাড়িতে ভিড় জমায়। বিকেলে উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের বাড়িতে নুসরাতের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছলে হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা, মা শিরিনা আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ছোটভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বারবার মূর্চ্ছা যান। নুসরাতের মরদেহ একনজর দেখতে সকাল থেকে অপেক্ষা করা মানুষের চোখে-মুখে ছিল কান্নার ছাপ।

বিজ্ঞাপন

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে নুসরাতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। পরে নুসরাতের মরদেহ সোনাগাজী ছাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয়।

এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ময়না তদন্ত শেষে ডাক্তারা স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন। ১২টায় লাশ নিয়ে রওয়ানা হয়ে বিকেল ৫টায় তার বাড়িতে পৌঁছে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স।

এদিকে নুসরাতের জানাজা শেষে সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমৃদ্ধ সোনাগাজী উন্নয়ন ফোরাম। মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ইব্রাহিম মাহমুদ শাকিল, মুতিগঞ্জ ইউপি সদস্য মো. খোকনসহ সংগঠনের অনেকে। মানববন্ধনে এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নেন।

শনিবার (৬ এপ্রিল) মাদরাসার অভ্যন্তরের সাইক্লোন সেন্টারের তিনতলার ছাদে নিয়ে আলিম পরীক্ষার্থীর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পরদিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিমকে প্রধান করে ও সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান।

এদিকে তিন কার্যদিবস ১০ এপ্রিল বুধবার শেষ হলেও কাজ শুরুই করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। ওইদিন জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এনামুল করিম আরও সাতদিন সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও বর্ধিত তারিখ জানানো হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিকেএম এনামুল করিম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শুরু না হলেও আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে তদন্ত শুরু করেছি। জেলা প্রশাসক যতদিন সময় বর্ধিত করবেন ওই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।

আসামিপক্ষের আইনজীবীকে আ.লীগ থেকে বহিষ্কার

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেওয়ার মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তাদানকারী অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল আহাম্মদ সোহাগকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি স্থানীয় কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান।

খবরটি নিশ্চিত করেছেন ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করিম উল্লাহ। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি জানান, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ ও সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির খুনের আসামিদের সহায়তা দেওয়ায় তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। ওইদিন নুসরাতকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে নিয়ে বোরখাপরা চারজন তাকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যান নুসরাত। এর আগে, শনিবার গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনি বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন। সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এমএইচ/একে

আরও পড়ুন

বাড়ির পথে নুসরাত
নুসরাতের লড়াইটা কে চালাবে এখন?
‘ডিপ বার্নে’র কারণেই নুসরাতের মৃত্যু
সাগর-রুনি-তনুর মতো নুসরাতের মামলাটি যেন হারিয়ে না যায়: হাইকোর্ট
নুসরাত হত্যা মামলায় আসামিপক্ষে থাকায় আ.লীগ নেতা বহিষ্কার
নুসরাতের মৃত্যু কি আমাদের চোখের পর্দা এখনো সরাবে না?

জানাজা দগ্ধ মাদরাসা শিক্ষার্থী

বিজ্ঞাপন

এনসিপির ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠন
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০৭

আরো

সম্পর্কিত খবর