রবীন্দ্রনাথের বাবা মিয়া খালিফা!
১৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৫:৪৮
ঢাকা: নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের বহু নির্বাচনি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কী?’ এই প্রশ্নের সম্ভাব্য যে চারটি উত্তর দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্ন তারকা মিয়া খালিফার নাম! তবে তার নাম লেখা হয়েছে ‘মিয়া কালিফা’।
শুধু তাই নয়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস ‘আম-আঁটির-ভেঁপু’র (প্রশ্নে আঁটি বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই) রচয়িতার সম্ভাব্য নাম হিসেবে রাখা রয়েছে সাবেক পর্ন তারকা অভিনেত্রী সানি লিয়নের নাম!
এমন অদ্ভুত প্রশ্নপত্রে বুধবার (১৭ এপ্রিল) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়। প্রশ্নপত্রটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা জন্ম দিয়েছে তুমুল সমালোচনার।
শুধু তাই নয়, এই প্রশ্নপত্রে রয়েছে এমন আরও অদ্ভুত বিষয়। চতুর্থ প্রশ্নটিতে প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস কোথায়— এমন প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরে রাখা হয়েছে রাজধানীর বলধা গার্ডেনের কথা। তবে নামটি লেখা হয়েছে ‘বলদা গার্ডেন’।
আবার ২২ নম্বর প্রশ্ন শেষে যতীন্দ্রমোহন বাগচীর বিখ্যাত ‘কাজলা দিদি’ কবিতার প্রথম দুটি লাইন উদ্দীপক হিসেবে দেওয়া হলেও তাতে ‘শোলোক’ শব্দটিকে ভুল করে লেখা হয়েছে ‘শ্লোক’। প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নের শেষে ‘উদ্দীপক পড়ে ১৩ ও ১৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও’ লেখা হলেও সেখানে কোনো উদ্দীপকের উপস্থিতিই নেই। আবার ৯ নম্বর প্রশ্নটিই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ১৯ নম্বর প্রশ্নে। এছাড়া বেশকিছু বানান ভুল তো আছেই।
নবম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন অসংলগ্নতায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একটি স্কুলের প্রশ্নপত্রে কীভাবে পর্ন তারকার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, তা দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
বিষয়টি নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয় প্রকাশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তাছাড়া আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না বলে বিষয়টি প্রথমে জানতে পারিনি। আজ অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শংকর চক্রবর্তী। প্রশ্নপত্রটিও তিনিই তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে স্কুল সূত্রে। এ বিষয়ে শংকর চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি মানবিক ভুল। আমি বুঝতেই পারিনি এটি এমন বিতর্ক তৈরি করবে। প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আর কখনো এমন ভুল হবে না।’
‘এক ছাত্রের খসড়া প্রশ্নের সঙ্গে ভুল হয়ে ছাপা হয়ে গেছে। দয়া করে এটিকে খবর বানাবেন না,’—আলাপে এমন অনুরোধ জানান ওই শিক্ষক। এই ভুলের জন্য যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সৌমিত্র শেখর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটি অশিক্ষক সুলভ আচরণ। সে যে নিজে লেখাপড়া করেনি বা দায়িত্ব নিয়ে লেখাপড়া করায় না, সেটা স্পষ্ট। আমাদের শিক্ষক সমাজের প্রতি সাধারণ মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করার একটি ফাঁদ হিসেবে সে এই কাজ করেছে। শিক্ষকতা হচ্ছে একটি দায়িত্বশীল পেশা। শিক্ষকদের মানুষ অনুসরণ করে।’ এছাড়া তার এই কাজটি করা মোটেও উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন সৌমিত্র শেখর।
সারাবাংলা/টিএস/টিআর