Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ছিল অন্ধকারে আলোর দিশার মতো’


১৭ মে ২০১৯ ০৯:৫৭

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর সবখানে মানুষের মধ্যে ছিল কেবলই আর্তনাদ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তখন দিশেহারা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরলেন, এটা সবার কাছে ছিল এক নবজন্মের অনুভূতির মতো। তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও আওয়ামী লীগের সবার কাছে মনে হয়েছিল, তারা যে অন্ধকারে রয়েছেন সেই অন্ধকারে আলোর দিশা হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন। ৩৮ বছর আগে আজকের এই দিনটিতে (১৭ মে) যখন ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা, সেদিন তিনিও লাখো মানুষের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেদিনের স্মৃতি মনে পড়লে আজও শিহরিত হয়ে ওঠেন গোপালগঞ্জের এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এস এম কামাল হোসেনের জন্ম গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার জোনাসুরে, ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি। কৈশোর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। স্কুল-কলেজ ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খুলনা খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতিই ছিলেন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি।

ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে সেদিন ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিলে মিছিলে, স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের সড়ক হয়ে শেরেবাংলা নগরের অবস্থান নেয়। সেদিন জনতার জনসমুদ্র, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়। জনতা প্রতিজ্ঞ শপথে স্লোগান তুলেছিল, ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, পিতৃ হত্যার বদলা নেব’, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’।

বিজ্ঞাপন

এস এম কামাল হোসেন

সেই লাখো জনতার ভিড়ে ছিলেন এস এম কামাল হোসেনও। সেদিনের সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, আমি তখন খুলনায় ছাত্রলীগ করি। খুলনা থেকে লঞ্চে করে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঢাকার সদরঘাটে এসে নামি। তারপর ওইখান থেকেই আমরা এয়ারপোর্টে দিকে যাই। সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল, প্রচণ্ড র ঝড় ছিল। সেদিন আমি ওনাকে (শেখ হাসিনা) দেখতে পারিনি। শুধু দূর থেকে বক্তৃতা আর কান্নার শব্দ শুনেছি লাখ লাখ লোকের সমাগমে দাঁড়িয়ে।

কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সাড়ে চার লাখ লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, নির্যাতন করেছিলেন। হাজারও নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছিল। সারাদেশের মানুষের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। আর সেই দুঃসময়ে, সেই অন্ধকার সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরতে আসেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটা ছিল আশীর্বাদের মতো।

‘১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ একটি নতুন দিকের সন্ধান পেয়েছিল, যার প্রমাণ এখনও তিনি দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্ন যে তিনিই বাস্তবায়ন করতে পারেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে আজ সফল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেটাই দেখিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন শোষিত বঞ্চিত মানুষের নেতা ছিলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা। বঙ্গবন্ধু শান্তির প্রতীক ছিলেন। তার কন্যা হিসাবে শেখ হাসিনাও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্বজুড়ে,’— বলেন তিনি।

কামাল হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট-বেদনা-আহাজারি থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রতীক হচ্ছে শেখ হাসিনা।’

বঙ্গবন্ধু নিজেই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘বাবার পাশে থেকে তার সহকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখেছেন শেখ হাসিনা। দেখেছেন, কিভাবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিভাবে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শেখ হাসিনা সেই শিক্ষাটি পেয়েছিলেন। আর সেই শিক্ষা দিয়েই তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করেছেন। শুধু তাই নয়, দেশের রাজনৈতিক সংকটের সময়গুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে সংকট থেকে রক্ষা করেছিলেন। তার সঠিক সিদ্ধান্ত ও সাহসী সব পদক্ষেপের কারণেই আজ সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বুকে।’

বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম ও আওয়ামী লীগের পরবর্তী প্রজন্মকে শেখ হাসিনার কোন দিকগুলো অনুসরণ বা অনুকরণ করতে পারে— সে বিষয়ে এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। দেশপ্রেমের দিক থেকে তিনি তুলনাবিহীন। মানবতা, সততা ও গণতন্ত্রের প্রতি তার যে শ্রদ্ধা, নিবেদন, সেটাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। মানুষের জন্য রাজনীতি করতে হলে ঠিক এমনই নিবেদন থাকতে হয়, মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হয়।’

শেখ হাসিনার ৩৯তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে আগামী দিনে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে আশাবাদ জানান এস এম কামাল হোসেন।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

এস এম কামাল হোসেন শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর