তিন বছরেও বন্ড অটোমেশনের অগ্রগতি শূন্য
২৩ মে ২০১৯ ১৬:১৩
ঢাকা: বন্ড ব্যবস্থার মূল অংশীজন হলো রপ্তানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান। যারা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। বর্তমানে ম্যানুয়াল বন্ড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্খিত সেবা দিতে একদিকে যেমন সময়ক্ষেপন হচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু প্রায় ৩ বছর হতে চললেও বন্ডের অটোমেশন প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। বলা যায়, বন্ড অটোমেশন নিয়ে এখনও কিছুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
বন্ড ব্যবস্থাপনা অটোমেটেড বা অটোমেশন হলে একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তার পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি, গুদামে মজুদ করা, গুদাম ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনে ব্যবহার এবং রপ্তানির পুরোটাই একটি কম্পিউটার জেনারেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। আর বন্ড অটোমেশন হলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে এবং রপ্তানি বাণিজ্যে গতি আসবে। পাশাপাশি বর্তমানে ইন টু বন্ড রেজিস্ট্রার (পণ্য গুদামে প্রবেশ) ও এক্স বন্ড রেজিস্ট্রারে (বাহির হওয়া পণ্য গুদাম থেকে) তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বন্ড অফিসে ব্যবসায়ীদের ছোটাছুটি করতে হবে না।
এদিকে, জানা গেছে, বন্ড অটোমেশনের কাজটি দেওয়া হয়েছে কনসালট্যান্ট সিনেসিস আইটি ফার্মকে। বন্ড অটোমেশনের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে। আর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের জুনে। কিন্তু এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর জন্য এনবিআরে সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর অনুমোদিত ১৬ জন জনবলের কথা বলা হলেও কাজ করছে ১২ জন। সাধারণত এই ধরনের প্রকল্পে কাজ করে থাকে মধ্যমসারির কর্মকর্তারা। কিন্তু সেই পর্যায়ের জনবলও নেই বন্ড অটোমেশন প্রকল্পে
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের সাবেক এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, যেখানে ২ বছর ৯ মাসেও প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি সেখানে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো কতোটুকু যুক্তি সঙ্গত সেটা আমার বোধগম্য নয়। সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের মতো বন্ডেড প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এতো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয় এজন্য দ্রুত তথ্য সংগ্রহের জন্য অটোমেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অটোমেশন একমাত্র উপায় যেখানে দুর্নীতি বন্ধ করা যায়। ইচ্ছামত কেও ফাইল ধরে রাখতে পারবে না। বর্তমান সরকার বন্ডের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছেন। কিন্তু পণ্য আসার পর সেই পণ্যের হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অটোমেশন দরকার।
এ বিষয়ে বন্ডের অটোমেশন প্রকল্পের উপ-পরিচালক রিজভী আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, বন্ড ব্যবস্থাপনার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। টেকনিক্যাল সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বন্ড ব্যবস্থাপনার সকল অফিস পরিদর্শন করে তার বন্ডিং ব্যবস্থাপনার একটি রূপরেখা নিয়েছে। এরপর এটি বাস্তবায়নের জন্য সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে আলোচনা করছে এবং কোথায় কি সমস্যা আছে সেটা সনাক্ত করছে। অটোমেশন হলে বন্ডিং ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। বন্ডের কার্যক্রম আরও বেশি গতিশীল হবে। বিভিন্ন ডকুমেন্ট চেকিং সহজ হবে। চোরাচালান রোধ করা যাবে। একই সাথে প্রজেক্টের জনবল ও বাজেট আরও বেশি হলে দ্রুত প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব হবে। একই সাথে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে দ্রুত বন্ড অটোমেশন হওয়া দরকার। কিন্তু আমরা ভালো সাপোর্ট না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে সময় লাগছে।
নির্ধারিত সময় প্রায় অতিবাহিত হলেও বন্ড অটোমেশনের অগ্রগতি কেনো শূন্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, জনবলের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে হয়তো কিছুটা সময় বেশি লাগবে। তবে, আমরা দ্রুতই বন্ড অটোমেশনে চলে যাব। চোরাচালান রোধ এবং স্বচ্ছতা আনতে হলে অটোমেশনের বিকল্প কিছুই নেই। একই সাথে অটোমেশন হলে কাস্টমস কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুসম্পর্ক আরও বেশি বিদ্যমান থাকবে। কেননা অনেক সময় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি হয় তবে অটোমেশন হয়ে গেলে সেটা আর হবে না। কাজেই অটোমেশন খুব দ্রুতই হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সারাবাংলা/এসজে/জেএএম