Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারত রাজি, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হচ্ছে দর্শনা


১১ জুন ২০১৯ ১৫:৪৭

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ভারত। ফলে দু’দেশে আমদানি-রফতানির নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখানে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে এটি জেলার ব্যবসার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সড়ক পথে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু ছিলো। ইন্দো-চায়না ও ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে ওই স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৭২ সালে তা ফের চালু হয়ে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ওই স্টেশনটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চালু করার প্রস্তাব রাখলে ভারত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চালু করতে রাজি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার আব্দুল আলীম জানান, বাংলাদেশের দর্শনার সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু রয়েছে। আবার ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে সপ্তাহের বন্ধের দিন ছাড়া দর্শনা হয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন ভারতের কলকাতার চিৎপুর পর্যন্ত যাতায়াত করছে। এক্ষেত্রে ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য দেশে আমদানি হচ্ছে কিন্তু রফতানি করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, ভারত থেকে রেলে পণ্য আমদানি করার ফলে দর্শনা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। কারণ আমদানি পণ্য সবই রেল যোগাযোগের মাধ্যমে আসে। সেগুলো ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো সংশ্লিষ্ট রেলস্টেশনে গিয়েই খালাস হয়।

দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে দর্শনা একটি ব্যবসার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে। এখানে বিভিন্ন ব্যাকের শাখা চালু হবে, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক-লরি ভাড়া, বেশি পরিমান শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। প্রতিদিন ভারত থেকে (৪২টি রেল ওয়াগন) ১ র‌্যাকের বেশি এবং ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য দর্শনায় ঢুকলে প্রতিদিন সেগুলো খালাস করতে ২০০টি ট্রাক ও কয়েকশ শ্রমিক প্রয়োজন হবে।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মালামাল নিয়ে ৫০০-৬০০ ট্রাক আসে সেগুলো খালাস করতে ৩ দিন থেকে ১৮ দিন সময় লাগে। এতে দারুনভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে চাপ কমবে এবং আমদানী-রফতানী সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

দর্শনা ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন দফতর থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৮ ও ৯ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে ‘জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস’ ১২তম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে ওয়াগেনে দর্শনা-গেদে রুটের মাধ্যমে মালামাল আমদানি-রফতানি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতের গেদে দিয়ে জনসাধারণ যাতায়াত করছে।

সভায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের দর্শনার জয়নগর চেকপোস্ট ও ভারতীয় অংশের ৮০০ মিটার রাস্তা খুবই সরু। রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে দর্শনার ২০০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়ে বলা হয়।

এসময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন চালু প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেহেতু রাস্তা উন্নয়নের কারণে এখনই দর্শনা-গেদে অংশ দিয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। সেজন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে রাজি হয় ভারত।

দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার আব্দুল আলীম জানান, জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে সড়ক পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে রাজি হলেও এটার বাস্তবরূপ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অর্থাৎ জীবননগরের দৌলৎগঞ্জে কোনো বকাঠামো নেই। এই ক্ষেত্রে দর্শনার অবস্থান সুবিধাজনক। সেখানে ভারতের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০০ মিটার রাস্তা দ্রুতই প্রশস্ত করা সম্ভব। পাশাপাশি মালামাল সংরক্ষণের জায়গাও এখানে রয়েছে।

সারাবাংলা/এমও

দর্শনা স্থলবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর