১৫ বছর ধরে অকার্যকর চসিকের মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ
২ আগস্ট ২০১৯ ১১:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ডেঙ্গু রোগের প্রকোপের মধ্যে মশা নিধন অভিযান চালিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ অকার্যকর হয়ে আছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নেই। ছয়টি কীট সংগ্রহকারীর পদ আছে, কিন্তু সেগুলোও খালি। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিভাগটি অকার্যকর হয়ে থাকলেও মশা নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাদের কার্যক্রম থেমে নেই।
কখন মশার লার্ভা জন্মায়, কখন ম্যালেরিয়া উপদ্রব হয়, মাঠ পর্যায়ের গবেষণা ও পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সেটা জানা এই বিভাগের কাজের আওতায় পড়ে। সেটা নির্ণয়ের পর সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন পর্যায়ে করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করাও এই বিভাগের কাজ। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে এ সংক্রান্ত কোনো কাজ না হওয়ায় শুধুমাত্র ধারণার ওপর ভিত্তি করেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ব বিভাগ নামে এই বিভাগটি আছে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিভাগটি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অধীনে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামো অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন বিভাগের অধীনে আছে একজন ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পদ। সাথে ৬টি কীট সংগ্রহকারীর অস্থায়ী পদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পদটি খালি আছে। এরপর ধাপে ধাপে ছয়টি কীট সংগ্রহকারীর পদও খালি হয়ে গেছে। মূলত ২০০৪ সালের পর এই বিভাগের আর কোনো কার্যক্রমই নেই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সামসুদ্দোহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমোদিত জনবল কাঠামো ছিল না। গত এপ্রিলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্মচারি চাকুরি বিধিমালা-২০১৯ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১১ জুলাই গেজেট হয়েছে। এখন আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে শূন্য জনবলের তালিকা পাঠাবো। অনুমোদন সাপেক্ষে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। আস্তে আস্তে সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে।’
তবে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা না থাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের কাজে কোনো প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন না সামসুদ্দোহা।
‘আমাদের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ তো মশা নিধনের কাজ করছে। ওষুধ ছিটাচ্ছে। ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পদটা হচ্ছে গবেষণাধর্মী পদ। তারা কীট নিয়ে গবেষণা করে ও সুপারিশ দেয়। এই কাজ করার জন্য আরও অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। সুতরাং তাদের জন্য আমাদের কাজ থেমে নেই।’ বলেন সামসুদ্দোহা
সূত্রমতে, গত ১১ জুলাই চাকুরি বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পর সিটি করপোরেশন থেকে ৯ হাজার ৬০৪ জনের পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামোর একটি তালিকা অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ও ৬ জন কীট সংগ্রহকারীর পদও উল্লেখ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন বিভাগ মশা নিধনের কাজ করলেও ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার পদটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছর এডিস মশার প্রার্দুভাব হয়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। এই বিভাগটি যদি কার্যকর থাকত, তাহলে সারাবছর কীট সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারত। কখন, কোন এলাকায় এডিস মশার বিস্তার ঘটছে সেই তথ্য দিতে পারত। সেটা না থাকায় পরিচ্ছন্ন বিভাগ এখন সনাতন পদ্ধতিতে সারা শহরে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এটা কোনো কার্যকর পদ্ধতি নয়। এর সুফলও তেমনভাবে পাচ্ছে না নগরবাসী।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক চসিকের মশক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ মশা নিয়ন্ত্রণ