পাকিস্তানি আদালতে ‘ব্লাসফেমি’ খুনের রায় প্রদান
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:৫৫
সারাবাংলা ডেস্ক
পাকিস্তানের একটি কোর্ট মাশাল খানের হত্যার দায়ে একজনকে মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনকে ২৫ বছর কারাদণ্ড এবং ২৬ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। মাশাল খানকে গত বছর এপ্রিল মাসে ধর্মীয় নিন্দা ছড়ানোর অভিযোগে হত্যা করা হয়।
হরিপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এ মামলার রায় দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ইসলামিক কট্টরপন্থীদের হামলার আশংকায় এই কড়াকড়ি ব্যবস্থা যদিও পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, মাশাল হত্যার প্রতিবাদকারীরা যেন জেলের সামনে এসে জড় না হতে পারে তাই এই ব্যবস্থা।
কে ছিল মাশাল খান?
মাশাল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আব্দুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের ছাত্র ছিল।
স্বাধীনচেতা এ তরুণ নিজেকে মানবতাবাদী দাবী করত। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমটির দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটানো ছিল চে গ্যাভেরার, কার্ল মার্ক্সের পোস্টার, লেখা ছিল স্বাধীন মতের পক্ষে স্লোগান।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সে মুসলিম বিরোধী মনোভাব পোষণ করত। প্রায়ই নাকি তাকে মুসলিম বিরোধী তর্কে জড়াতে দেখা যেত। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব নিয়েও তাকে প্রতিবাদ মুখর হয়েছিল এ তরুণ।
কী হয়েছিল সেদিন?
১২ এপ্রিল ২০১৭ আব্দুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ে গুজব ছড়িয়ে পরে মাশাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মকে নিন্দা করে কিছু প্রকাশ করেছে। রক্ষণশীল ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে ধর্মকে নিন্দা করা বা ব্লাসফেমির বিরুদ্ধে আইন খুব কড়া। কেউ ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়ার বিধান আছে।
শতাধিক ক্ষুব্ধ ছাত্র ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারি মিলে ঘরের দরজা ভেঙ্গে মাশালকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসে। এরপর তাকে বেদম পেটানো হয়, ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় সবশেষে গুলি করে মারা হয়। মরে যাওয়ার পরেও তার উপর চলে অত্যাচার।
আসলে কী হয়েছিল?
মাশালের মৃত্যুর পরে পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। পুলিশ ধারণা করে এটা উদ্দেশ্য প্রণীত হত্যাকাণ্ড। মাশালকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এই গুজব রটানো হয়েছিল।
পুলিশ মাশালকে হত্যার দায়ে ৬১ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। যার ৫৭ জনের বিচার আজ সম্পন্ন হল। বাকিরা পলাতক আছে।
মাশালের মৃত্যুর পরে পাকিস্তানে জুড়ে এই হত্যার বিচারের দাবী তোলা হয়।
রায় ঘোষণার আগে আদালতের বাইরে মিডিয়াতে বক্তব্য রাখেন মাশালের ভাই আইমাল। তিনি আশা করেন, তার পরিবারকে কষ্টভোগের অজুহাতে যে কাউকে কখনোই যেতে হবে না।
তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেন, পলাতক আসামীদের যেন খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হয়।
সারাবাংলা/এমএ