Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘লাভবান’ হতেই গোয়েন্দা কার্যালয়ে ইয়াবা চুরি কনস্টেবলের


২৩ আগস্ট ২০১৯ ১১:৪২

ঢাকা: অসৎভাবে লাভবান হতেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের ভেতরে একজন সহকারী কমিশনারের রুমের তালা ভেঙে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট চুরি করেছিল গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল সোহেল রানা। ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ তথ্য দিয়েছেন।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) পরিদর্শক শাহাবুদ্দীন খলিফা সারাবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের এই পরিদর্শক বলেন, ১৮ বছর ধরে ডিবিতে চাকরি করছেন সোহেল রানা। তিনি ধরা পড়ার আগে গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের জোনাল টিমে কর্মরত ছিলেন। আর্থিকভাবে লাভবান হতেই তিনি এ কাজ করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। আদালতেও সোহেল রানা ইয়াবা চুরির কথা স্বীকার করেছেন। রমনা থানার চুরির মামলায় তিনি এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। খুব শিগগিরই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

সোহেল রানার ইয়াবা চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি ডিএমপির পক্ষ থেকে একটি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। সেই মামলারও তদন্ত চলছে। তদন্তে চুরির বিষয়টি প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত হতে পারেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক অশোক কুমার সিংহ বলেন, গোয়েন্দা কার্যালয়ে এর আগে এত বড় চুরির ঘটনা কখনো ঘটেনি। সোহেল রানা প্রথমে সহকারী কমিশনারের রুমে দরজা ও পরে ওই রুমের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ইয়াবাগুলো চুরি করেছে। যেখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকে, সেখানে কেউ চুরি করে পার পাবে না, সে কথা সে নিজেও জানে। এরপরও সে চুরির মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ওপরের নির্দেশনা রয়েছে, এই্ চুরির সঙ্গে আর কারা জড়িত, সোহেল রানাকে ড্রয়ারে ইয়াবা থাকার কথা কে জানিয়েছে, তদন্তে সবকিছু বের করে আনা হবে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গোয়েন্দা পুলিশে সাধারণত এক টিমের খবরাখবর আরেক টিম জানতেই পারে। কিন্তু জব্দ হওয়া মালামাল কোন টিম কোথায় রেখেছে, তা অন্য টিমের জানার কথা নয়। সোহেল রানা গোয়েন্দা উত্তর বিভাগে কর্মরত। আর যেখানে চুরি করেছে, সেটি গোয়েন্দা পশ্চিমের একজন সহকারী কমিশনারের রুম। সচরাচর অন্য টিমের একজন কনস্টেবলের সেখানে যাওয়ার কথা নয়। তাই গোয়েন্দা পশ্চিম টিমের কেউই হয়তো সোহেল রানাকে ইয়াবা রাখার তথ্য জানিয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সোহেলের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন। জব্দ হওয়া ইয়াবা ওই সহকারী কমিশনারের রুমে রাখার তথ্য কে জানিয়েছে, সে কথাও তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ জুলাই গেন্ডারিয়া থানার একই মাদক মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম) সহকারী কমিশনার মজিবুর রহমানের রুমের ড্রয়ারে রাখা হয়। গত ১৬ আগস্ট সকাল পৌনে ৮টার দিকে ডিবির মেইন গেটে ডিউটি করার জন্য টিমে কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু সুফিয়ান গাজী চাবি নিয়ে ওই রুমে পোশাক নিতে গিয়ে দেখতে পান, দরজার তালা ভাঙা। ঘটনাটি সহকারী কমিশনার মজিবুরকে জানালে তিনি এসে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ইয়াবা চুরির বিষয়টি জানতে পারেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কনস্টেবল সোহেল রানাকে ডেকে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। সিসিটিভি ফুটেজের কথা জানালে এক পর্যায়ে চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এরপর সোহেল রানার তথ্য অনুযায়ী, শাহজাহানপুরের তার ভাড়া বাসার খাটের জাজিমের নিচ থেকে ওই পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শাহাবুদ্দীন খলিফা বলেন, এলসি কম্পাউন্ডার ওমর ফারুক ওই দিন রাত ১টার দিকে ঘুমাতে যান। রাত ২টা ৩৭ মিনিটে সোহেল রানা হাতে সিগারেট লাগানো অবস্থায় পায়ে হেঁটে সহকারী কমিশনার মজিবুরের রুমে প্রবেশ করেন। রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে ওই রুম থেকে বের হন সোহেল রানা। এরপর রাত ৩টা ৩৯ মিনিটে ডিবির মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে বেইলী রোডের দিকে চলে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, একজন চোরের শাস্তি যা হয়, তাই হবে। সেই অনুযায়ী আদালতে চার্জশিট পাঠাবে তদন্ত কর্মকর্তা। এতে তার চাকরি থাকল কি থাকল না, সেটি দেখার বিষয় না। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করে গোয়েন্দা বিভাগেরই ড্রয়ার ভেঙে রাতের আঁধারে চুরি করেছেন, এটা কি মানা যায়!

চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম সারাবাংলাকে বলেন, একজন সহকারী কমিশনারের ড্রয়ার ভেঙে জব্দ হওয়া ৫ হাজার পিস ইয়াবা চুরির মামলায় একজন কনস্টেবলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এই চুরির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের আর কেউ জড়িত কি না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের চুরির ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ইয়াবা চুরি গোয়েন্দা কার্যালয়ে ইয়াবা চুরি জব্দ হওয়া ইয়াবা চুরি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর