মার্কিন নির্বাচন-২০২০ : প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় কারা এগিয়ে?
২৩ আগস্ট ২০১৯ ২০:৩৭
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হবে আগামী ২০২০ সালের ৩ নভেম্বরে। কিন্তু ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রধান দুই দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া। এই দু’দল থেকে মোট ২৫ জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
রিপাবলিকান পার্টি
রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান মাত্র ২ জন। ক্ষমতাসীন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক ম্যাসাচুসেটস গভর্নর বিল ওয়েল্ড। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনঃ নির্বাচনের জন্য আবেদন দাখিল করেছেন অনেক আগেই, ১০ জানুয়ারি ২০১৭ সালেই। সাধারণত ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টই দলের হয়ে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ১৬ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২য় মেয়াদে ক্ষমতা লাভ করেছেন। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২০ সালের নির্বাচন ট্রাম্পের জন্য কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়। অপরদিকে প্রার্থিতায় ট্রাম্পের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিল ওয়েল্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা-প্রকাশ করেন ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল।
ডেমোক্রেটিক পার্টি
রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার দৌড় যতটাই নিরস ঠিক উল্টো ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে। এবারে সর্বোচ্চ ২৩জন এই দলটি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছেন। এরমধ্যে একজন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, ৭ বর্তমান সিনেটর, ২ গভর্নর, ৭ মেয়র, আরও রয়েছেন ব্যবসায়ী ও লেখক।
যেকোনো দলের চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কে হতে পারেন সে সম্ভাবনা বিচারের ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো, জরিপ, তহবিল সংগ্রহ ও সংবাদে প্রাধান্য। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর তথ্যে (প্রায় সম্ভাব্য) এ পর্যন্ত যেসব ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতায় এগিয়ে আছেন তারা হলেন,
- জো বাইডেন- জাতীয় জরিপে ২৬% জনপ্রিয়, তহবিল ২১.৫ মিলিয়ন ডলার, সংবাদে প্রাধান্যে ১ম।
- বার্নি স্যান্ডার্স- জাতীয় জরিপে ১৬% জনপ্রিয়, তহবিল ২০.৭ মিলিয়ন ডলার, সংবাদে প্রাধান্যে ৪র্থ।
- কামালা হ্যারিস- জাতীয় জরিপে ১৪% জনপ্রিয়, তহবিল ১৩.২ মিলিয়ন ডলার, সংবাদে প্রাধান্যে ২য়।
- এলিজাবেথ ওয়ারেন-জাতীয় জরিপে ১৩% জনপ্রিয়, তহবিল ১৬.৫ মিলিয়ন ডলার, সংবাদে প্রাধান্যে ৩য়।
- পিট বুটেজাজ- জাতীয় জরিপে ৪% জনপ্রিয়, তহবিল ৭.১ মিলিয়ন ডলার, সংবাদে প্রাধান্যে ৫ম।
কিভাবে নির্বাচিত হবেন দুদলের চূড়ান্ত প্রার্থী?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় টিকিট পেতে হলে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের দীর্ঘ প্রাথমিক বাছাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এজন্য কিছু কিছু রাজ্যে ‘ককাস’ ও বেশিরভাগ রাজ্যেই ‘প্রাইমারি’ প্রক্রিয়ায় বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। যেসব রাজ্যে ‘ককাস’ হয় সেগুলো হলো, আলাস্কা, কলোরাডো, হাওয়াই, কানাস, মিইনি, মিনোসটা, নেভাদা, নর্থ ডাকোটা, ওইমিং ও আইওয়াতে। এছাড়া বাকিসব অঞ্চল ও রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রাইমারি পদ্ধতিতে দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইকরণ।
প্রাইমারি
প্রাইমারি নির্বাচন পদ্ধতি খুব সহজ। ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নাম থাকে। ভোটকেন্দ্র হতে পারে স্কুল, লাইব্রেরি বা অন্যকোনো স্থান। নিবন্ধিত ভোটাররা তাদের দলের পছন্দের প্রার্থীকে বা মনোনয়নের জন্য প্রতিনিধিকে ভোট দেন। তবে আবার প্রাইমারিতেও কোথাও কোথাও হয় উন্মুক্ত নির্বাচন। যে কেউ, যে কোনো দলের প্রার্থীকে মনোনয়নের জন্য ভোট দিতে পারেন। এরপর ওই রাজ্যের প্রতিনিধিরা দলের জাতীয় সম্মেলনে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে কাউকে চূড়ান্ত করেন।
ককাস
ককাস আবার একটু ভিন্ন। সমবেতরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের আলোচনা ও বিতর্ক শুনেন। প্রার্থীরা তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন কেন তারা যোগ্য। পরে ভোটাররা ডেলিগেট বা প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। ডেলিগেটরা দলের বার্ষিক কনভেনশনে সিদ্ধান্ত জানান।
ককাস পদ্ধতিতে নিজের ডেলিগেট পেতে ন্যূনতম শতকরা ১৫ ভাগ ভোট পেতে হয় প্রার্থীদের। যেমন, গতবার টেড ক্রুজ আইওয়া থেকে ৮জন ডেলিগেট পেয়েছিলেন, ট্রাম্প ও রুবিও পেয়েছিলেন ৭জন করে।
ব্যতিক্রমও রয়েছে,
আবার কোনো স্টেটে একদলের প্রাইমারি ও অন্য দলের ককাস পদ্ধতির ব্যবহার হতে পারে। যেমন কেন্টাকি তে ডেমোক্র্যাটদের প্রাইমারি হলেও রিপাবলিকানদের রয়েছে ককাস পদ্ধতি। আবার ২০২০ সালের জন্য যেমন মিনোসেটা ও কলোরাডো ককাস থেকে প্রাইমারি পদ্ধতিতে ছুটেছে।
জানা যায়,
২০২০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চল থেকে রিপাবলিকানরা ককাস ও প্রাইমারির মাধ্যমে ২৪৭২ জন ডেলিগেট বা প্রতিনিধি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে পাঠাবে। তারা ব্যালটে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দিবে।
চলতি বছরের, জুন ও জুলাই মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি প্রেসিডেন্টশিয়াল ডিবেট বা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এনবিসি নিউজ, এমএসএনবিসি ও সিএনএন আয়োজন করে এসব বিতর্কের। তবে রিপাবলিকান পার্টির ডিবেট নিয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ এর ক্যালেন্ডার
২০১৯ সাল
জুন ২৬-২৭: প্রথম ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ডিবেট অনুষ্ঠিত হয় মিয়ামিতে।
জুলাই ৩০-৩১: দ্বিতীয় ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ডিবেট হয় ডেট্রয়েটে।
অগাস্ট ২৮: এদিন সেপ্টেম্বরের তৃতীয় ডিবেটের জন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের নিজেদের যোগ্যতা ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। এজন্য প্রার্থীর ১ লাখ ৩০ হাজার ডোনার থাকতে হবে ন্যূনতম ২০ টি রাজ্যে। এছাড়া, অন্তত ৪টি গণমাধ্যমের শতকরা ২ ভাগ সমর্থন থাকতে হবে; নতুবা আইওয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নেভাদা, সাউথ ক্যারোলিনার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জনমত জরিপে।
সেপ্টেম্বর ১২: তৃতীয় ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ডিবেট হবে হাউস্টনে। এটি প্রচারের দায়িত্বে রয়েছে এবিসি ও ইউনিভিশন। ধারণা করা হচ্ছে মাত্র ৭ জন এই বিতর্কে টিকে থাকবেন। তারা হলেন, জো বাইডেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন, বার্নি স্যান্ডার্স, কামালা হ্যারিস, কোরি বুকার, পিট বুটেজাজ ও বেটে ওরাউকে। বাদ পড়তে পারেন বাকিরা।
এছাড়া অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ডিবেট।
২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির ‘ককাস’ ও ‘প্রাইমারি’।
দ্য ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালের ১৩-১৬ জুলাই, মিলওইকি ও উইসকনসিনে। দ্য রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালের ১৪-২৭ আগস্ট, শার্লট ও নর্থ ক্যারোলিনায়। এই দুটি কনভেনশনে দুই দলের চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করা হবে।
এরপর, নভেম্বরের ৩ তারিখে হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
সম্পূর্ণ তালিকা
রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা চেয়েছিলেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প, বিল ওয়েল্ড।
আর ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে
কলরাডো সিনেটর মাইকেল বেনেট, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, নিউ ইয়র্ক মেয়র বিল ডে ব্লেইসো, নিউ জার্সি সিনেটর কোরি বুকার, মন্টানার গভর্নর স্টিভ বুলক, ইন্ডিয়ানা সাউথ বেন্ড মেয়র পিট বুটেজাজ, সাবেক গৃহায়ণ ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী জুলিয়ান কেস্ট্রো, সাবেক মেরিল্যান্ড রিপ্রেজেন্টেটিভ জন ডেলেনি, হাওয়াই রিপ্রেজেন্টেটিভ টুলসি গ্যবার্ড, নিউ ইয়র্ক সিনেটর ক্রিস্টে গিলবার্ড, ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কামালা হ্যারিস, ওয়াশিংটন গভর্নর জে অ্যান্সলি, মিনেসোটা সিনেটর অ্যামি ক্লোবাচার, ফ্লোরিডা মিরামার মেয়র ওয়েনি ম্যাসাম, ম্যাসাচুসেটস রিপ্রেজেন্টেটিভ সিথ মুল্টন, সাবেক টেক্সাস রিপ্রেজেন্টেটিভ বেটো ওরোকে, ওহিও রিপ্রেজেন্টেটিভ টিম রায়ান, ভারমন্ট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, সাবেক পেনসিলভানিয়া রিপ্রেজেন্টেটিভ জোয়ি সিস্টাক, ক্যালিফোর্নিয়ার বিলিয়েনিওর টম স্টেয়ার, ম্যাসাচুসেটস সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, টেক্সাসের লেখক ম্যারিয়েনা উইলিয়ামসন।
নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী এন্ড্রু ইয়াং (১৩ আগস্ট, ২০১৯ সালে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন), ওহিও সিনেটর শেরড ব্রাউন (সড়ে দাঁড়ান ৭ মার্চ ২০১৯ সালে), সাবেক নিউ ইয়র্ক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ (না লড়ার কথা জানান ৫ মার্চ ২০১৯ সালে), সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার (সড়ে দাঁড়ান ৪ মার্চ ২০১৯ সালে), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি (পিছু হটেন ১০ জুন, ২০১৯ সালে) সাবেক ভার্জিনিয়া গভর্নর টেরি ম্যাকওলফি (না লড়ার কথা জানান ১৭ এপ্রিল ২০১৯ সালে), ওরেগন সিনেটর জেফ মার্কলি (সড়ে দাঁড়ান ৫ মার্চ, ২০১৯ সালে), আরও বাতিল হয়েছেন, সাবেক কলরাডো গভর্ন জন হিকেনলুপার (১৫ আগস্ট ২০১৯), ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সাবেক কংগ্রেসনাল ক্যান্ডিডেট রিচার্ড ওডেজা, ক্যালিফোর্নিয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভ এরিক সাল ওয়েল।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে উইকিপিডিয়া, রয়টার্স, লস অ্যাঞ্চেলস টাইমস ও অন্যান্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।