Monday 02 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়, ফ্যাসিবাদ, জেন্ডার বৈষম্য— এমন মার্কিন নির্বাচন, যা কেউ দেখেনি আগে

ডেভিড স্মিথ
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:০০ | আপডেট: ৬ নভেম্বর ২০২৪ ০২:৫৫

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি:: দ্য গার্ডিয়ান

মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকার ভোটের দিনের চেনা সব দৃশ্য ফিরে এলো— ভোটারদের দীর্ঘ সারি, প্রার্থীদের নিজেদের ভোট দেওয়া, টিভি বিশেষজ্ঞদের টাচস্ক্রিন জুড়ে নির্বাচনি মানচিত্র ঘাঁটাঘাঁটি, লাল ও নীল রঙা রাজ্যগুলো থেকে একে একে ফলাফল আসা— সেই সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

তবে এবারের চিত্র কিছুটা হলেও আলাদা।

শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতার পরিবর্তন, দুটি ভারসাম্যহীন বিতর্ক, দুটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, বারাক ওবামার উদ্দীপনা এবং অ্যাডলফ হিটলারকে মনে করিয়ে দেওয়া— এর সবকিছুর সাক্ষী ২০২৪ সালের এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সহিংসতা ও আনন্দ— সবকিছু মিলেমিশে একাকার এই নির্বাচন ঘিরে।

বুধবার এই নির্বাচনের ফল জানা যেতে পারে, নাও পারে। মুদ্রার যেকোনো পিঠ উঠে আসতে পারে সেই ফলাফলে। তবে যাই ঘটুক না কেন, সেটি হবে যুগান্তকারী। হয়তো আমেরিকার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন কমলা হ্যারিস। আবার ৭৮ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পও আবার ফিরতে পারেন হোয়াইট হাউজে, যিনি কি না প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ডধারী, পাশাপাশি দুটি অভিশংসনও মোকাবিলা করেছেন।

ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিক এই পক্ষেরেই দৃঢ় বিশ্বাস— তারাই নির্বাচনে অবশ্যম্ভাবীভাবে জয় পেতে যাচ্ছে। দুপক্ষেরই বিশ্বাস— তারা পরাজিত হলে সেটিই হবে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও আমেরিকান জীবনযাপন পদ্ধতির অবসান। এ যেন বিপুল গতিতে পরস্পরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকা দুটি ট্রেন, যাদের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। নির্বাচনের ফল যাই হোক, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর জন্য সেটা হবে ভয়াবহ। তেমন পরিস্থিতির অর্থ তাদের এমন পরাজয়, বিখ্যাত সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন যাকে অভিহিত করেছিলেন ‘স্নায়বিক গৃহযুদ্ধ’।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

ট্রাম্প গত এক দশক ধরে শ্রেণি ও জাতিগত বিভেদের বীজ বপন করে গেছেন। এর সঙ্গে এই নির্বাচনে যুক্ত হয়েছে জেন্ডার বৈষম্য, দুই বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে বাতিল করে দেওয়ার মাধ্যমে যাকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাটরা প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে একজন নারীকে, যেখানে ট্রাম্প নতুন ভোটারের সন্ধানে আগের মতোই অমার্জিত পুরুষতান্ত্রিক ও ‘ব্রো’ সংস্কৃতিকেই বেছে নিয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট মরিন ডাউড লিখেছেন— ‘এই নির্বাচনটা মূলতই লৈঙ্গিক যুদ্ধ। এতে কে জিতবে? জিতবেন কি সেই নারীরা, বিশেষ করে সেই তরুণীরা, যারা কি না ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুরুষতান্ত্রিক আচরণ ও ভীতিকর অঙ্গভঙ্গি এবং তার দলের আচরণে আতঙ্কগ্রস্ত? নাকি জিতবেন ল্যাটিনো ও কৃষ্ণাঙ্গ তরুণসহ সেই পুরুষরা, যারা ট্রাম্পের দাম্ভিকতা, গালিগালাজ আর অপমানজনক আচরণেই আকৃষ্ট এবং ট্রাম্প যাদের কাছে ক্ষয়িষ্ণু পুরুষতন্ত্রের জন্য এক অব্যর্থ সমাধান?’

ট্রাম্পের তিনটি নির্বাচনের সময়কালকে বিবেচনায় নেওয়া যাক। ২০১৬ সালে প্রথম নির্বচনের সময় ট্রাম্প সাহসী কিন্তু নবাগত, যিনি রাজনীতি ও গণমাধ্যমকে সবসময় অবজ্ঞা করতেন। তিনি এমন সব সমর্থকদের পাশে পেয়ে যান, যাদের কাছে মনে হয়েছিল যে তাদের আমেরিকান স্বপ্ন হাতছাড়া হয়েছে। ২০২০ সালে আবার ট্রাম্প ভোটারদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন তার বিশৃঙ্খল ও আত্মকেন্দ্রিকতার কারণে, যেখানে মহামারিকে সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়াও বড় একটি কারণ ছিল।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালের নির্বাচনের ইতিহাস যখন লেখা হবে, জুলাইয়ের একটি সপ্তাহই থাকবে সেই বর্ণনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৩ জুলাই পেনসিলভ্যানিয়ার বাটলারে এক প্রচার সভায় ২০ বছর বয়সী থমাস ক্রুক্স রাইফেল নিয়ে হামলে পড়েন। ট্রাম্প মারা যাননি, তবে তার কানে গুরুতর আঘাত পান। ওই হামলায় অন্য একজন প্রাণও হারান। ওই সময়কার একটি ছবি রয়েছে, যেখানে রক্তমাখা মুখ নিয়ে ট্রাম্প দাঁড়িয়ে আছেন। ছবিতে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ এবং তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘লড়াই করো’। ঠিক এই ছবিটিই তার পুরো নির্বাচনি প্রচারযাত্রার এক প্রতীকী যেন।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ছবি: অনলাইন

দুই দিন পর রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়। ওই সম্মেলনে ট্রাম্পের প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়ে অনেকেই কানে ব্যান্ডেজ পরে উপস্থিত হন। একের পর এক বক্তা ডায়াসে উঠে বলে যান, ট্রাম্পকে ঈশ্বরই রক্ষা করা করেছেন, কারণ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি এখনো শেষ করে উঠতে পারেননি। মনোনীত প্রার্থী, ট্রাম্প সেই কনভেনশনে বক্তব্য শুরু করেছিলেন সেই দুঃখ ভারাক্রান্ত সুরেই। পরের এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পুরোনো আক্রোশের কথা তুলে অবশ্য সেই আবহ নষ্ট করে দেন তিনি।

এই নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটদেরও একটি বয়ান প্রয়োজন ছিল। ওই সপ্তাহেরই শেষে, ২১ জুলাই তারা সেটি পেয়ে যায়। জনমত জরিপে পিছিয়ে থাকা ও বিতর্কে কোণঠাসা হয়ে পড়া ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন সরে দাঁড়ান নির্বাচনি দৌড় থেকে। বাইডেনের এই ঘটনাকে দলের প্রভাবশালী নেতা ও ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন অভিহিত করলেন দেশপ্রেমের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে। বললেন, এমন নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমের উদাহরণ তিনি আর কখনো দেখেননি।

বাইডেন দ্রুতই সমর্থন জানান কমলা হ্যারিসকে। ওবামা ও ক্লিনটন পরিবারসহ দলের বাকিরাও সবাই সেই পদাঙ্কই অনুসরণ করলেন। ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা ‘আনন্দের রাজনীতি’র স্লোগান নিয়ে হাজির হলেন। রানিং মেট ঘোষণা করলেন গভর্নর টিল ওয়ালজকে, যিনি কি না প্রতিপক্ষকে বলেন ‘অদ্ভূত’। এরপর শিকাগোর সেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশন যেন পরিণত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক, আশাপ্রদ ও আনন্দের এক স্থানে। এরপর একের পর এক রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনি কার্যক্রম ছিল যেন উৎসবের মতো।

ট্রাম্পের প্রচার সেদিক থেকে ছিল ভুলে ভরা। কমলা হ্যারিসের বিরোধিতা যেমন তার প্রচার শিবির ঠিকমতো করতে পারেনি, কমলার জন্য অপমানসূচক কোনো নামও দিতে পারেননি তিনি। এর বদলে ট্রাম্প একটি উদ্ভট, মিথ্যা গল্প ফেঁদে বসেন। বলেন, অভিবাসীরা ওহাইওর স্প্রিংফিল্ডে কুকুর-বিড়াল খেয়ে বেড়াচ্ছে। ফিলাডেলফিয়াতে যে একটিমাত্র বিতর্কে দুজন মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেখানেও আইনজীবী কমলা বিধ্বস্ত করেন ট্রাম্পকে। সময়টা ছিল কমলার পক্ষে। তাকে দেখে মনে হয়েছে, ট্রাম্পিজমের জন্য সবাই দীর্ঘ দিন ধরে যে প্রতিষেধক খুঁজছে, সেটি তিনি পেয়ে গেছেন।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: অনলাইন

তবে সবকিছুর পরও শেষ একটি নাটকীয়তা বাকি ছিল এবং সেটিই ছিল সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত— নির্বাচনি প্রচারের শেষ দুই মাস ছিল একেবারেই নাটকীয়তাবিহীন, এমনকি উত্তেজনাহীন, যেন এই চিত্রনাট্যের রচয়িতারা আরও আগেই উত্তেজনা ও নাটকীয়তার শেষটা দেখে ফেলেছিলেন। আর বড় কোনো বড় পরিবর্তনও হয়নি। এর মধ্যে জনমত জরিপ একটি স্থিতিশীল জায়গায় পৌঁছে যায় এবং এক ধরনের ভারসাম্যও চলে আসে।

কমলা তার প্রচারে এতই সুশৃঙ্খল ছিলেন যে আগের নির্বাচনগুলোতে যে রকম দেখা গেছে, ওই ধরনের কোনো বেফাঁস মন্তব্য তিনি করেননি। তবে বাইডেনের নীতি থেকে তার দূরে সরে থাকার চেষ্টা রিপাবলিকানদের কিছুটা হলেও আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্প এতটাই অসংযত ছিলেন যে অনেক আমেরিকানকে তিনি নিরুত্তাপ ও উদাসীন করে দেন। ২০১৬ সালের ‘হলিউড অ্যাকসেস’ (একটি টিভি শো) টেপ ফাঁসের মতো কিছু এবার ঘটেনি, যে ভিডিও থেকে শোনা যাবে যে ট্রাম্প নারীদের শরীর নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করছেন, যার জের ধরে কিছু রিপাবলিকান তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার পর্যন্ত চেয়েছিলেন। এবারে যখন তিনি চলচ্চিত্রের চরিত্র হ্যানিবাল লেক্টার বা মৃত গলফারর আর্নল্ড পামারের শরীর নিয়ে অশোভন মন্তব্য করলেন, অথবা নিউ ইয়র্কের একটি সমাবেশে এক কৌতুকশিল্পী পুয়ের্তো রিকোকে অপমান করলেন, তখন রিপাবলিকানরা বিষয়টিকে বিবেচনাতেই নেয়নি।

এই নির্বাচনি প্রচার ঘিরে অক্টোবর মাসে যদি কোনো বিস্ময় থেকে থাকে সেটি হয়তো ছিল টেক জায়ান্ট ইলন মাস্কের বিপুল পরিমাণ অনুদান, যা সুইং স্টেটগুলোতে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ট্রাম্পকে সহায়তা করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিংবা রাজনীতির মঞ্চে হিটলারের ফিরে আসা, সেটিও কিছুটা বিস্ময় হয়ে আসে। মূলত ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন কেলি জানান যে প্রেসিডেন্ট কীভাবে নাৎসি জেনারেলদের প্রশংসা করেছিলেন। এ ঘটনাকে ঘিরে ট্রাম্পকে ‘মন থেকে ফ্যাসিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন সামরিক বাহিনীর সাবেক শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মাইলি।

বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে, কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ছবি: অনলাইন

কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচার ছিল বেশ আনন্দময়। সেখান থেকে তিনি সামান্য সরে গিয়ে ট্রাম্পকে দেওয়া জেনারেল মাইলির এই অভিধাকে সমর্থন করলেন। সেই ট্রাম্প আবার বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীরা ‘দেশের রক্তকে বিষাক্ত করে তুলছে’। তিনি সেনাবাহিনীকেও ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’র বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন। এর মাধ্যমেই ট্রাম্পের বিশৃঙ্খলা ও বিভেদের চরিত্র নিয়ে খেলতে শুরু করলেন কমলা।

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিআইএর পরিচালক লিওন প্যানেটা বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করাটা অনেক দিক থেকেই খুব কঠিন। আমরা কি আমাদের সংবিধান ও আইনের শাসন মেনে চলব, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া মেনে চলব এবং সত্যের পথে থাকব; নাকি আমরা এমন কিছুকে বেছে নেব, যার মাধ্যমে আমরা শৃঙ্খলার পরিবর্তে বেছে নেব বিশৃঙ্খলাকে।’

‘ট্রাম্প বিশৃঙ্খলা তৈরি করবেন। এ নিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই। কারণ এটাই তার কাজের ধরন। তিনি বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে কাজ করেন, কারণ মাস্তানরা এভাবেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তিনি একজন মাস্তানই। প্রশ্ন হলো— আমাদের অন্য নেতারা কি তাকে সেই কাজগুলো করতে দেবেন যা আমাদের গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক? আমার মনে হয় না যে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের মতো একজন মাস্তান জিতে যাবেন,’— বলেন প্যানেটা।

এবারের আগে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। এর কোনোটিতেই প্রশ্ন করতে হয়নি— ‘ফ্যাসিস্ট কি জয়ী হয়েছে?’ কিন্তু অন্তত ছয় কোটি ভোটারের আগাম ভোট দেওয়ার পর আরও কোটি কোটি মানুষ যখন মঙ্গলবার ভোট দিতে যাচ্ছেন ভোটকেন্দ্রের দিকে, তখন এই প্রশ্নটিই আমেরিকাবাসীদের তাড়া করে ফিরছে।

লাস ভেগাসে ভোটারদের লাইন। ছবি: এপি

জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাককালীন তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন মো ভেলা। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গণতন্ত্রকে সজাগ ও উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। এমন না যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো। তবে সারা বিশ্বই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের চর্চাকেই গণতন্ত্রের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। সেই যুক্তরাষ্ট্র আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। আমাদের যে সম্মান দেওয়া হতো, তা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্বের এমন কোনো গণতন্ত্র নেই যেটি এ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে নেই।’

যদি এ পরিণতি এড়ানো সম্ভব হয় এবং কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, গোটা বিশ্বই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে এটা ভেবে যে জনতুষ্টিবাদী ঢেউকে আরও একবার প্রতিহত করা গেছে। ট্রাম্পকে তখন ব্যতিক্রম বা বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখা সম্ভব হবে, মানদণ্ড হিসেবে নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে এক গভীর ক্ষত থেকেই যাবে। ট্রাম্প যুগের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল বিভেদ ও বিভাজনের রাজনীতি— নারী বনাম পুরুষ, কৃষ্ণাঙ্গ বনাম শ্বেতাঙ্গ, শহর বনাম গ্রাম, হলিউড বনাম হৃদয়ভূমি, উদারপন্থি বনাম রক্ষণশীল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইকো চেম্বার’ সেই বিভাজনকেই আরও উসকে দিয়েছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা এখন ক্রমেই এনে অন্যকে বুদ্ধিহীন, অলস, অনৈতিক বা অসত্‍ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ কর্মীই এটি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে বর্তমান রাজনৈতিক আবহ মার্কিন নাগরিকদের একে অন্যের শত্রু হিসেবে দেখাচ্ছে। একই জরিপে ৭৮ শতাংশ মানুষ বলছেন, কেবল মানুষের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তাদের খারাপ আচরণের শিকার হতে দেখেছেন তারা।

সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী জনি টেলর বলেন, ‘জনমত জরিপের তথ্য যদি সঠিক হয়, আমার বিশ্বাস আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখব— ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষই সকালে ঘুম থেকে উঠে তেতো অনুভবন করবে, কারণ তাদের সমর্থন করা প্রার্থী জয় পাননি। অন্যদিকে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের খবরে আনন্দিত হয়ে উঠবে। এটা অনেকটা সুপার বোলে (যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়নশিপ) নিজের দলের হেরে যাওয়ার মতো। এই বিষয়গুলো মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত। আপনি হয়তো গর্ভপাত সমর্থন করেন। এর মতো কোনো বিষয় যদি হয়, তাহলে এর পক্ষে থাকা প্রার্থীর পরাজয়ে আপনার কাছে মনে হবে যে হয়তো পৃথিবীটাই শেষ হয়ে যাবে।’

কমলা হ্যারিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হলেও জয় পেলে দুটি দলকে নিয়েই কাজ করবেন। তার মন্ত্রিসভায় রিপাবলিকান কাউকে রাখবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে উগ্র ডানপন্থি এমন অনেকেই আছেন যারা একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনায় চরম ক্ষুব্ধ, ঠিক যেমনটি হয়েছিলেন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর। ফক্স নিউজ ও অন্যান্য রক্ষণশীল গণমাধ্যম ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে সেই মনোভাবকে আরও উসকে দেবে। সেক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ আবহের একটি সমাজ, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের এতটা কাছে এসেছেন, সেই সমাজের নিজেকে নিরাময়ের জন্য একটি নির্বাচনই যথেষ্ট হবে না, প্রয়োজন পড়বে আরও বেশি কিছু।

[ডেভিড স্মিথ দ্য গার্ডিয়ানের ওয়াশিংটন ব্যুরো চিফ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনের দিন তার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান। অনুবাদ করেছেন তরিকুর রহমান সজীব]

সারাবাংলা/টিআর

কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর