‘বেয়াদব’ শিক্ষার্থীর ‘ভাষা পরিবর্তনে’ শাসন বশেমুরবিপ্রবি ভিসির!
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৫৮
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পর ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। তাতে শিক্ষার্থীকে ‘বাছুর’ ও ‘বেয়াদব’ বলে আখ্যা দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে উপাচার্য এমনভাবে কথা বলতে পারেন কি না— সে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই উপাচার্য জানালেন, সন্তান বেয়াদবি করলে তাকে শাসন করার অধিকার বাবা রাখেন। আর সংসার চালাতে গেলে আদর যেমন করতে হয়, তেমনি শাসনও করতে হয় কখনো কখনো।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন এমন কথা বলেন। এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়— এমন ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- বশেমুরবিপ্রবি-এর সিদ্ধান্তে ডব্লিউজেএনবি’র প্রতিবাদ
গত ১১ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ফাতেমা তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই আদেশে তাকে বহিষ্কারের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, জিনিয়া ডেইলি সান পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক। ক্যাম্পাসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণেই তাকে বহিষ্কারের মুখে পড়তে হয়েছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হলে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলমের সই করা ওই লিখিত বক্তব্য পরে সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করেন উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলন করছেন উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করেন। এ ক্ষেত্রে কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়নি এবং প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো তথ্য নেওয়া হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
উপাচার্য আরও বলেন, জিনিয়া অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশালীন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফেসবুক, ইমেইল আইডি হ্যাক করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ভর্তি পরীক্ষা বানচালের অপচেষ্টাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়— এমন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন জিনিয়া। তিনি এরই মধ্যে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি দুই বার হ্যাক করেছেন।
এছাড়াও ফাতেমা তুজ জিনিয়ার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে মিথ্যাচার ও অশালীন মন্তব্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেন উপাচার্য।
‘বাছুর’ বলে শাসন করেছিলেন উপাচার্য!
এদিকে, জিনিয়ার সঙ্গে উপাচার্য নাসিরের একটি কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে অনলাইনে। সেই কথোপকথনের এক পর্যায়ে জিনিয়াকে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটা (আইন বিভাগ) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাচ্ছুর (বাছুর), তুই আবার (জানতে চাস) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?’
একজন উপাচার্য হয়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারেন কি না, জানতে চাইলে উপাচার্য দাবি করেন, তিনি ‘বাবার দায়িত্ব’ পালন করেছেন। তার অনুমতি না নিয়েই জিনিয়া ওই কথোপকথন রেকর্ড করেছে বলেও জানান তিনি।
উপাচার্য নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সংসার চালাতে শাসন করব, আবার আদর করব। এটাই তো স্বাভাবিক।’
উপাচার্য বলেন, ‘সন্তান তার বাবার সঙ্গে বেয়াদবির ভাষায় কথা বলবে এবং সেই সন্তানের ভাষা পরিবর্তন করতে বাবা সন্তানকে শাসন করবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সন্তান যদি কারও প্ররোচনায় বাবার কথা রেকর্ড করে সেটিকে অশালীন ভাষা মনে করে ফেসবুকে প্রচার করে, সেটা তার ব্যাপার।’
এর আগেও একাধিক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন— এ বিষয়ে জানতে চাইলে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, ‘এখানে যোগ দেওয়ার পর আজ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছি— এমন কোনো রেকর্ড নেই। তবে নানা অপরাধের কারণে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। সংসার চালাতে শাসন করব, আবার আদর করব— এটাই তো স্বাভাবিক।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূর উদ্দিন ও প্রক্টর মো. আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ অস্বীকার জিনিয়ার
উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে জিনিয়ার নামে যেসব অভিযোগ এনেছেন, সেগুলো অস্বীকার করেছেন তিনি। জিনিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত?’— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। সেই পোস্ট নিয়েই উপাচার্য তার সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেন।
জিনিয়া বলেন, এর কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি নিয়ে লেখায় ভার্সিটির একজন শিক্ষার্থীকে ‘উপাচার্য বাহিনী’র সদস্যরা তুলে নিয়ে যান। ওই শিক্ষার্থী আমাকে দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য দিতেন। তার কাছ থেকে ফোন ও ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে আমার সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট নেওয়া হয়। এর কিছুদিন পরই আমাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অধ্যাপক খোন্দকার নাসির উদ্দিন উপাচার্য নাসির উদ্দিন ফাতেমা তুজ জিনিয়া বশেমুরবিপ্রবি বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী বহিষ্কার